ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নতুন ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরোধিতায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একাধিক রাজ্যে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আন্দোলনের পর গতকাল দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা বন্ধ-এর ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠন। কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবিতেই মূলত এ বন্ধ-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। বন্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্যে মোট ৪৮৩টি ট্রেন সেবা বাতিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগর, নয়ডাসহ একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ বন্ধকে কেন্দ্র করে যাতে নতুন করে অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে না পড়ে সে কারণে আগে থেকেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়-এমন কোনো কাজে লিপ্ত না থাকার জন্য রাজ্যের জনগণকে সতর্কও করা হয়েছে প্রতিটি রাজ্যের তরফে।
গত ১৪ জুন সেনাবাহিনীতে চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দেয় নরেন্দ্র মোদির সরকার। চার বছর পর মাত্র ২৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’ জওয়ানদের সেনাবাহিনীতে স্থায়ীকরণ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে বাকিদের ভবিষ্যৎ কী হবে। এরপরই বিহার, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ অন্তত ১২টি রাজ্যে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, কোথাও কোথাও তা সহিংসতার রূপ নেয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিহারের। ফলে বনে্ধও যাতে সহিংসতার আকার না নেয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই রাজ্যটিতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে নীতিশ কুমারের সরকার। রাজ্যটির অন্তত ২০টি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে বিজেপির দলীয় কার্যালয়গুলোতেও নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে আট শতাধিকের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করাসহ একাধিক ধারায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। পাঞ্জাবেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। ইতোমধ্যে ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগে ৩৫টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আটক করা হয়েছে একাধিক ব্যক্তিকেও। উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগর, নয়ডাসহ একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং সেখানকার মানুষকেও সতর্ক করা হয়েছে কোনোরকম সহিংসতায় না জড়াতে। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রশাসন।
ঝাড়খণ্ডেও সব স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। নবম ও একাদশ শ্রেণির চলমান পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।হরিয়ানার রোহতাক ও ফতেহাবাদে এদিনও বিক্ষোভ দেখানো হয়। যদিও আম্বালা, রেওয়ারি, সোনিপথসহ একাধিক জায়গায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অশান্তি বা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এড়াতে কেরালায়ও সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া শহরে কড়া নিরাপত্তা রয়েছে।
হরতালের জেরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে দিল্লিতেও।