বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নকে সায়েস্তা করতেই সৃষ্টি হয়েছিল ন্যাটোর। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শুরু হয়েছে সংস্থাটির শীর্ষ সম্মেলন। যেখানে প্রধান্য পাচ্ছে সেই রাশিয়াই -এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সবচেয়ে উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। একদিকে আমেরিকা ও ইউরোপ অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহেই জার্মানিতে শীর্ষ সম্মেলনে বসেছিলেন জি-৭ নেতারা। তা শেষ হতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলন শুরু হয়েছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে তিন দিনের এ সম্মেলন মঙ্গলবার শুরু হয়। মূল আলোচনা শুরুর আগে সামরিক ব্যয় বাড়াতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমা এই জোটের প্রধান। তাঁর ভাষায়, আগামীর বিশ্ব ক্রমেই ‘অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক’ হয়ে উঠছে। বৈঠকে পূর্ব ইউরোপে আরও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

ন্যাটোর বৈঠকে এবার প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো, রাশিয়া ও চীন। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটো এখন কী ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে চীনকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে চীনের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়েও কথা হবে। সেজন্যই এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়ার দেশগুলোকে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে সমর্থন করে যাওয়া জরুরি। কারণ, ইউক্রেন বর্বরোচিত আক্রমণের মুখে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে এই বর্বরতা আমরা দেখিনি।’

বৈঠকে যোগ দিতে ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন স্পেনে পৌঁছেলেন। মাদ্রিদে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফেলিপ। বাইডেনের সঙ্গে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজের বৈঠকও হয়েছে।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটির নিকটতম প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এতে দীর্ঘদিনের জোট নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। দেশ দুটি এই সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।  যে কোনো মুহূর্তে এই দুটি দেশ সদস্য হয়ে যাচ্ছে।

আট গুণ বাড়ছে ্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স : নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি র‌্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্সের শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে ন্যাটো মিত্ররা। এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় আট গুণ বাড়িয়ে ৪০ হাজার থেকে ৩ লাখ করা হচ্ছে। বাহিনীর নতুন সদস্যরা নিজ দেশেই অবস্থান করবেন। তবে রুশ সীমান্তবর্তী ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলে দ্রুত মোতায়েনে তাঁদের প্রস্তুত রাখা হবে। ওই অঞ্চলে সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের মজুত বাড়ানোরও পরিকল্পনা আছে জোটটির।

নজরে চীন : ন্যাটোর বৈঠকে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই দেশগুলো এশিয়া প্যাসিফিকে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। গতকালই জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বসার কথা জো বাইডেনের। তবে গত সপ্তাহে ন্যাটো মহাসচিব বলেছিলেন, ‘আমরা চীনকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে চাই না।’ তবে তিনি বলেন, ‘বেইজিং আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের স্বার্থ, আমাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যোগ দিতে সমর্থন তুরস্কের : জোটটির নিয়ম অনুযায়ী, সব সদস্যের সম্মতি ছাড়া নতুন কোনো দেশ ন্যাটো সদস্য হতে পারবে না। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড যখন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছিল তখন তুরস্ক তার বিরোধিতা করেছিল। ফলে তাদের ন্যাটো সদস্য হওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তুরস্ক তার জায়গা থেকে সরে এসেছে। বিবিসি জানায়, তুরস্কের অভিযোগ ছিল সুইডেন ও ফিনল্যান্ড কুর্দিদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে তুরস্কের উদ্বেগকে প্রাধান্য দিয়ে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গও বলেছেন, কুর্দি যোদ্ধাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ আরও জোরাল করার ব্যাপারে রাজি হয়েছে সুইডেন। সেই সঙ্গে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর থাকা বিধিনিষেধ তুলে নিতে সম্মত হয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

সর্বশেষ খবর