শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শ্রীলঙ্কায় কে দেবেন আলোর খোঁজ

শ্রীলঙ্কায় কে দেবেন আলোর খোঁজ

প্রেসিডেন্ট পদ থেকে গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের খবরে আনন্দে মেতে ওঠেন আন্দোলনকারীরা -এএফপি

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। চরম অর্থনৈতিক সংকটে নাস্তানাবুদ মানুষ শেষ পর্যন্ত রাজপথে নেমেছে। তাদের বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে গোটা দেশ। জীবন বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন সবচেয়ে বড় জনসমর্থন নিয়ে বছরতিনেক আগে সরকার গঠন করা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। মাসখানেক আগে এই জনরোসেই পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তারই বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তিনি সে সময় পালানোর চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পালাননি। এরপর মাসখানেক আন্দোলন কিছুটা নমনীয় হওয়ার পর গত বুধবার সকাল থেকে দেশে ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পরিবারসহ মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পরই ফের রাজপথের দখল নেয় সাধারণ মানুষ। মানুষ এ সময় প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাসভবন দখল করে নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এরপর ক্রমশই পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠায় রাতারাতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

গত কয়েক মাস শ্রীলঙ্কা সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের জনগণ রয়েছে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে। মৌলিক চাহিদার প্রায় সব কিছুরই অপর্যাপ্ততা জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ফলে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এখন দেশবাসীর প্রধান সমস্যা খাবারসহ অন্যান্য নিত্যদ্রব্য কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলা। পরিবারে খাদ্যের নিশ্চয়তা না থাকা, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট, জ্বালানি না থাকাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় সে দেশে জনগণের দিনরাত কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার পৌঁছেছে ৫৪.৬ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ৮০.১ শতাংশ, পরিবহন খরচ বেড়েছে ১২৮ শতাংশ। ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭০ শতাংশ পরিবার খাদ্য কমিয়েছে। অর্থাৎ কম খেতে বাধ্য হচ্ছে। ইউনিসেফ বিবিসিকে জানিয়েছে, সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। এই অবস্থার মধ্যে দেশটি এখন মূলত সরকার ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। আগামী ২০ তারিখ নতুন প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করার সম্ভাবনা আছে দেশটিতে। তবে আশার আলো হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে ভারত শ্রীলঙ্কাকে ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে শ্রীলঙ্কার একটি সর্বদলীয় অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিরোধী দলগুলো। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের ঘোষণার পর এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান তারা। যাই হোক, জনগণের তীব্র আন্দোলন আপাতত সফল হয়েছে কিন্তু এরপর কী ঘটবে? যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাকে খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাকরিসহ নানা বিষয়ের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কাকে একটি নতুন দিনের সন্ধান যে দিতে পারবেন, ইতিহাসের পাতায় নিঃসন্দেহে বীর হিসেবেই আখ্যায়িত হবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর