বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দাবদাহ নিয়ে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ

এমন খরতাপ চলবে ২০৬০ পর্যন্ত

ইউরোপ বলতেই চোখের সামনে ভেসে আসে বরফের আস্তরণ। সেখানে গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা বাংলাদেশের শীতকালের তাপমাত্রার প্রায় সমান। কিন্তু হঠাৎ করেই সেসব দেশে এখন মধ্যপ্রাচ্যের থেকেও বেশি গরম। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দেশে রেকর্ড ভাঙছে। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য দেখেছে তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গরমের রেকর্ড। একই অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের সব দেশেই। এর মধ্যে গতকাল স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানসেজ জানিয়েছেন, গত ১০ দিনের গরমে তার দেশে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থা নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তবে স্পেনের চেয়ে পর্তুগালের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে গরমে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এদিকে প্রচন্ড গরমে সেখানে কয়েক গুণ বেড়েছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এক লন্ডন শহরেই এক দিনে এক ডজন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে শহরের আগুন নেভানো গেলেও বনাঞ্চলের আগুন নেভাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে দমকল বাহিনীকে। ফ্রান্স, পর্তুগাল ও স্পেনে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। গরম যত বাড়ছে, দাবানলের প্রকোপ তত ভয়াবহ হচ্ছে। এর মধ্যে ভয়াবহ সংবাদ শোনাল জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, সেখানে এখন যে দাবদাহ চলছে, তা আরও নিয়মিত আর স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। এ প্রবণতা চলবে অন্তত ২০৬০-এর দশক পর্যন্ত। জাতিসংঘ মঙ্গলবার এসব কথা জানিয়ে দাবদাহ নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলছে, বায়ুমন্ডলে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে এমন দেশগুলোর জন্য বর্তমান তাপপ্রবাহটি একটি সতর্কসংকেত। সংস্থাটির প্রধান পেত্তেরি তালাস জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা (দাবদাহ) আরও বেশি স্বাভাবিক ও নিয়মিত হয়ে উঠবে এবং নেতিবাচক এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। অন্ততপক্ষে ২০৬০-এর দশক পর্যন্ত। তিনি এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, পরিবেশকে বিরক্ত করার কারণে আমরা তাপমাত্রার একের পর এক রেকর্ড ভাঙছি। ভবিষ্যতে এমন দাবদাহ স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। এমনকি এর চেয়ে আরও বেশি দাবদাহ দেখতে হতে পারে আমাদের।’

পেত্তেরি তালাস আরও বলেছেন, ‘কার্বন নিঃসরণ এখনো বাড়ছে। আমরা যদি কার্বন নিঃসরণকে একটা সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে ২০৬০-এর দশকে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে। বিশেষ করে এশিয়ার বড় দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। কারণ, এসব দেশ বড় কার্বন নিঃসরণকারী।’ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে চলমান প্রচ  দাবদাহ নিয়ে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে ডব্লিউএমও। ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক পরিচালক মারিয়া নেইরা বলেন, ইউরোপে ২০০৩ সালের দাবদাহে ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। মারিয়া নেইরা বলেন, ‘আমাদের শরীরে তাপমাত্রা ঠিক রাখার যে সক্ষমতা, এ তাপ শরীরের সেই সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এতে নানান রোগে আক্রান্ত হবে মানুষ।’

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানিতে এরই মধ্যে এ বছরের সব থেকে গরম দিন রেকর্ড করা হয়েছে। পর্তুগালেও বাড়ছে গরমে মৃতের সংখ্যা। বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই এরকম তাপপ্রবাহ তৈরি হচ্ছে এবং সামনের বছরগুলোতে এরকম তীব্র তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইতালি এবং পর্তুগালসহ ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশজুড়েও এখন তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। ফ্রান্সে অন্তত ৬৪টি ভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বনে গত ৩০ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় দাবানল দেখা গেছে। গত ১২ জুলাই থেকে দেশটির প্রায় ৫০ হাজার একর বন পুড়ে গেছে। দাবানল থেকে বাঁচাতে ৩৪ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর