মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চার গণতন্ত্রপন্থির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল জান্তা

চার গণতন্ত্রপন্থির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল জান্তা

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। মৃতদের মধ্যে একজন সাবেক এমপিও আছেন। তার নাম ফিও জেয়া থাও। অন্যরা হলেন- লেখক ও আন্দোলনকারী কো জিমি, হ্লা মিয়ো অং এবং অং থুরা জ। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে অনুষ্ঠিত গোপন বিচারে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছেন।

গত জুনে সেনাবাহিনী তাদের মৃত্যুদ  ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছিল। দেশটির সামরিক জান্তা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি সরকারকে উৎখাত করে। এ অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয়, যদিও সে বিক্ষোভ দ্রুততার সঙ্গেই দমন করা হয়।

ছায়া সরকারের নিন্দা : অভ্যুত্থানের পাল্টা প্রতিবাদ হিসেবে গঠিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) নামের ছায়া সরকার এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ ঘটনায় তারা ‘মারাত্মক মর্মাহত ও দুঃখিত’। এ ছায়া সরকারে রয়েছে গণতন্ত্রপন্থি ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য এবং এনএলডির সদস্যরা। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছে, ‘নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি সামরিক জান্তাকে শাস্তি দেওয়া হোক।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের পর দেশটিতে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। তবে কীভাবে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।

এই চারজন সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে : ৫৩ বছর বয়সী কো জিমি ৮৮ জেনারেশন স্টুডেন্টস গ্রুপ নামে একটি গোষ্ঠীর সদস্য। এরা মূলত মিয়ানমারের একটি গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী গোষ্ঠী; যারা ১৯৮৮ সালের এক সামরিক জান্তাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য সুপরিচিত। কো জিমি তার গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের জন্য ২০১২ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন। গত বছর অক্টোবরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ৪১ বছর বয়সী ফিও জেয়া থাও ছিলেন এনএলডির একজন সাবেক আইনপ্রণেতা। তিনি একজন সাবেক হিপহপ শিল্পী। তিনি তার গানের কথা সেনাবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরার কারণে প্রায়ই সেনাবাহিনীর রোষের মুখে পড়তেন। বাকি দুজন- হ্লা মিয়ো অং এবং অং থুরা জয়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ ঘটনাকে ‘স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার অধিকার এবং ব্যক্তির নিরাপত্তার অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক প্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিষ্ঠুর আচরণের আরেকটি উদাহরণ এটি। এমন আরও শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনিও দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ ছাড়া জাপান সরকারও নিন্দা জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর