বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
জ্বালানি নিয়ে ইউরোপকে রাশিয়ার হুমকি

দুশ্চিন্তা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রেরও

দুশ্চিন্তা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রেরও

ইউরোপে শীত আসতে এখনো মাস তিনেক বাকি। শীত মানে বরফ পড়া শীত। আর এই কনকনে শীত থেকে ইউরোপবাসী নিজেকে রক্ষা করে বাসা-বাড়িতে হিটার জ্বালিয়ে। তবে এবার সেই হিটার কতটা চালাতে পারবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই ভীতি শুরু হয়েছে। কারণ হিটার চালানোর জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন হয় তা সরবরাহ করে রাশিয়া। ইউরোপের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশই সরবরাহ করে এই দেশটি। কিন্তু রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জ্বালানি সরবরাহ তারা কমিয়ে দেবে। ইতোমধ্যে দুই দফায় মোট সরবরাহের প্রায় ৫০ শতাংশই কমিয়ে দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তা আরও কমবে।

আর এই ভয় শুধু ইউরোপেই পাচ্ছে না : যুক্তরাষ্ট্রও পাচ্ছে। অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বুমেরাং হয়ে আমেরিকাকেই আঘাত করছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এ অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম জানায়, তারা নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে আগের তুলনায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করবে, যা তাদের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ।

মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গৃহীত এই পদক্ষেপ ছিল রাশিয়ার প্রতিশোধ। শীতকালে চলার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস নিয়ে গোটা ইউরোপকে অনিশ্চিত অবস্থায় ফেলেছে তারা। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিশ্ব জ্বালানি বিষয়ক প্রেসিডেনসিয়াল কো-অর্ডিনেটর আমোস হোচস্টেইনকে হোয়াইট হাউস ইউরোপে পাঠিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের এক মাস পর গঠিত মার্কিন-ইইউ জ্বালানি টাস্কফোর্সের সঙ্গে জ্বালানি পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনা করতে তিনি প্যারিস ও ব্রাসেলস সফর করবেন। মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়’। প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকলে ইউরোপের প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে।

ইউরোপের স্থিতিস্থাপকতা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যের প্রশ্নেও এটি একটি বড় পরীক্ষা হবে, কেননা ক্রেমলিনের ইউক্রেন থেকে পেছনে হটার কোনো লক্ষণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাসেলস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের কাছে শীতের জন্য গ্যাস সংরক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করেছে। মঙ্গলবার ইইউ দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীরা আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমাতে সম্মত হয়েছেন।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে উপকূল থেকে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার লম্বা যে পাইপলাইন করা হয়েছে গ্যাস সরবরাহের জন্য সেটিই নর্ড স্ট্রিম ১। প্রায় ১০ বছর ধরে চালু আছে এ গ্যাস পাইপলাইন। প্রতিদিনই এর মাধ্যমে জার্মানিতে ১৭০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস পাঠায় রাশিয়া। অন্যদিকে জার্মানি যত গ্যাস আমদানি করে তার ৫৫ ভাগই করে রাশিয়ার কাছ থেকে। আর এর বেশিরভাগই আসে নড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে। এখন রাশিয়ার হাত থেকে বাঁচতে ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করছে। কিন্তু তেমন সফল সমাধান এখনো পায়নি। জ্বালানি বিশ্লেষক কেট ডোরিয়ান বিবিসিকে জানান, ‘ইইউকে বিকল্প গ্যাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কাতারের মুখাপেক্ষী হতে হবে যারা ট্যাঙ্কারে করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করবে।’ ‘কিন্তু ইউরোপে যথেষ্ট সংখ্যক এলএনজি টার্মিনাল নেই। বিশেষ করে জার্মানির জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। জার্মানিতে এলএনজি আনলোড করার মতো সরঞ্জামাদিই নেই।’

গ্যাসের ঘাটতি পূরণের জন্য ইউরোপজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও সামনে আলোচনা হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জার্মানি ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা করলেও জ্বালানি সংকটের মধ্যে বার্লিনকে অবশিষ্ট তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু রাখার সময়সীমা বাড়াতে মার্কিন কর্মকর্তারা রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।

সর্বশেষ খবর