শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘোষণা উত্তর কোরীয় নেতার

যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘোষণা উত্তর কোরীয় নেতার

পিয়ংইয়ংয়ে সেনা সদস্যদের সঙ্গে কিম জং-উন

একটি দেশের ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা শুধুই যুদ্ধ। দেশের মানুষের পেটে খাবার থাকুক বা না থাকুক। অস্ত্র তৈরি করতেই হবে। সেই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকেই এই অবস্থা। আর দেশটি হলো উত্তর কোরিয়া। দেশটি গতকাল ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধ মুলতবির বর্ষ পালন করেছে। সেখানে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির নেতা কিম জং-উন। ভাষণে রাখঢাক না রেখেই জানিয়েছেন তার দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত।

কিম জং-উন বলেছেন, দেশের পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধাভিযানে মোতায়েনের জন্য তৈরি আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনো যুদ্ধের জন্য তার দেশ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

গতকাল রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএস এ খবর দিয়েছে। কোরিয়ান যুদ্ধবিরতির ৬৯তম বার্ষিকীতে তিনি প্রবীণ যোদ্ধাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই হুমকি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ও সিউল দাবি করেছে, ২০১৭ সালের পর প্রথমবার পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এরপর এমন মন্তব্য করলেন কিম জং উন। এ খবর দিয়েছে ডয়েচে ভেলে।

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, যেকোনো রকম সংকটে জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আমার সশস্ত্র বাহিনী। কঠোরভাবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে, যথাযথভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত। আমি আরও একবার পরিষ্কার করে বলছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো সামরিক সংঘাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। ১৯৫০-৫৩ সালের ২৭ জুলাই কোরিয়ান যুদ্ধ একটি চুক্তির মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছিল। উত্তর কোরিয়া একে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয় হিসেবেই দাবি করে আসছে। তাই যুদ্ধ সমাপ্তির বার্ষিকী ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে সামরিক কুচকাওয়াজ, আতশবাজি এবং নাচের মধ্যদিয়ে উদযাপন করে উত্তর কোরিয়া। ভাষণে নেতা কিম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আসা হুমকির কারণেই উত্তর কোরিয়াকে জরুরিভিত্তিতে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার নিয়মিত সামরিক মহড়াকে উস্কানি আখ্যা দিয়ে এর ভুল ব্যাখ্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিম বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন যে কোনো সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত। আর যুদ্ধাভিযানের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সুরক্ষাকবচ পারমাণবিক অস্ত্রও পূর্ণ শক্তি নিয়ে, নিখুঁতভাবে এবং দ্রুত কাজে লাগানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।’

বিবিসি জানায়, উত্তর কোরিয়া সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন উদ্বেগের মধ্যে নেতা কিম যুদ্ধের জন্য তার দেশের প্রস্তুত থাকা নিয়ে এই মন্তব্য করলেন। উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে সতর্ক করেছিল। উত্তর কোরিয়া সর্বসাম্প্রতিক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল ২০১৭ সালে। তবে বর্তমানে কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়ছে। উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ প্রতিনিধি সাং কিম বলেছেন, দেশটি এ বছর নজিরবিহীন ৩১ টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, যা ২০১৯ সালে দেশটির রেকর্ড ভাঙা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার চেয়েও বেশি। ওই বছর উত্তর কোরিয়া ২৫টি পরীক্ষা চালিয়েছিল। গত জুনে দক্ষিণ কোরিয়াও নিজস্ব আটটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাব দিয়েছে। তাছাড়া, উত্তর কোরিয়ার ফের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর আভাসের মুখে তাদেরকে সদ্য কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ওদিকে, উত্তর কোরিয়ার বিজয় দিবসের ভাষণে কিম দক্ষিণ কোরিয়াকেও কড়া কথা শুনিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়া কখনো আগ বাড়িয়ে হামলা করতে এলে দেশটির সরকার এবং সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে শাসিয়েছেন তিনি। কিম আরও বলেছেন, কোরিয়ান যুদ্ধ শেষের প্রায় ৭০ বছর পরও দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিপজ্জনক, অবৈধ বৈরি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে এবং উত্তর কোরিয়াকে দোষারোপ করে তারা তাদের আচরণের যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর