চাহিদা কমার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে একটি মন্দার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে কমে চলেছে জ্বালানি তেলের দাম। ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গতকাল বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআইর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১.১৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৭.৯৩ ডলার। যা ছয় মাসে সর্বনিম্ন। এর পাশাপাশি লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১.২৯ শতাংশ কমে হয়েছে ৯৩.৭১ ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল আমদানিকারক দেশ চীনের চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি সৌদি আরামকো তেলের উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত থাকার ঘোষণা দেওয়ায় দাম কমছে তেলের। এর আগে শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দর প্রতি ব্যারেল এখন ৯১ দশমিক ০৩ ডলার। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ০৬ ডলার বা ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। শুক্রবার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে।
চীন সরকারের প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী অপ্রত্যাশিতভাবে গত জুলাইয়ে চীনের অর্থনীতির গতি কমেছিল। অন্যদিকে চীনের দৈনিক পরিশোধিত তেল উৎপাদন কমে হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। ২০২০ সালের মার্চের পর চীনের অর্থনীতির গতি ও পরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন এতটা কমেনি। মুডিস অ্যানালিটিকস নামের একটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদ হেরোন লিন বলেছেন, ‘চীন সরকারের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দামের রেকর্ড হওয়ার কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব এবং ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।’সংকটে তেল বেচে আরামকোর লাভ দ্বিগুণ : তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো রবিবার জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৮৭.৯ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। গত বছর একই সময়ে লাভ হয়েছিল ৪৭.২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এবার প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি লাভ হয়েছে। করোনা মহামারির পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় তেলের চাহিদা বৃদ্ধি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল।
জুনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। পরে তা ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের বেশি কমে এলেও এখনো ১০০ ডলারের আশপাশে রয়েছে। সৌদি আরবের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস আরামকো চলতি বছরের শুরুতে কিছুদিনের জন্য অ্যাপলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছিল। এখন সে তালিকায় আরামকোর অবস্থান ২ নম্বরে। আরামকো প্রেসিডেন্ট আমিন নাসের আশা করছেন চলতি দশকে তেলের চাহিদা আরও বাড়বে। বর্তমানে দিনে ১ কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন করছে সৌদি আরব।
ক্রাউন প্রিন্স সালমান গত মাসে জানিয়েছিলেন, দেশটির সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা দিনে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল। সৌদি তেলের প্রধান ক্রেতা চীন (২০২০ সালে ২৪.৭ বিলিয়ন ডলার)। এর পরে আছে জাপান (১৫.১ বিলিয়ন), দক্ষিণ কোরিয়া (১২.৮ বিলিয়ন), ভারত (১১.৮ বিলিয়ন) ও যুক্তরাষ্ট্র (৬.৬ বিলিয়ন)।