সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

আরও ফুলেফেঁপে উঠছে রাশিয়ার অর্থনীতি

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত নিষেধাজ্ঞা ‘ভুল’ ছিল

মাস ছয়েক হলো ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। থেমে নেই ধ্বংস ও মৃত্যু। সব কিছু ছাপিয়ে এ যুদ্ধ এখন অর্থনৈতিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যা ১৯৪০ সালের পর আর দেখা যায়নি। যুদ্ধের পর রাশিয়ার ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে বেশ কিছু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত নিষেধাজ্ঞা ‘ভুল’ ছিল। রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো। এখন উল্টো ইউরোপে জ্বালানি সংকটের কারণে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চলতি সপ্তাহে ইউরোপে গ্যাসের দাম আরও ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী মাসগুলোতে জ্বালানির দাম আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, গত কয়েক মাসের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যায়, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফল নেতিবাচক। ১৯৯০ দশকে আমেরিকার আধিপত্য ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু সেই একক আধিপত্য বর্তমানে আর নেই। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে সামরিক দিক থেকে কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর মিত্র দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফলাফল ভয়াবহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে ওইসব দেশের ‘নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র’ বর্তমানে যে ‘অকার্যকর’ তা উন্মোচিত হয়েছে। সামরিক হামলার পর রাশিয়ায় বিভিন্ন প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এ সিদ্ধান্তটিও ভুল ছিল বলে দাবি দ্য ইকোনমিস্টের। কারণ যে উদ্দেশ্যে রাশিয়ার ওপর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা পূরণ হতে বহু বছর প্রয়োজন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছর রাশিয়ার অর্থনীতি কিছুটা ধুঁকবে। কিন্তু এরপর পুনরায় রাশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও তার মিত্ররা রাশিয়ার হাজার হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। রাশিয়ার ৫৮০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের অর্ধেকই জব্দ করা হয়েছে। দেশটির অধিকাংশ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ইউরোপে ভালো জনমত তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে স্বল্প মেয়াদে রাশিয়ার তারল্য সংকটের পাশাপাশি ব্যালেন্স অব পেমেন্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে যুদ্ধে অর্থ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে রাশিয়ার সংকট অনেক গভীরে ছিল। ধীরে ধীরে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে রাশিয়ার অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা চলে এসেছে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন অংশীদার খোঁজা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে মন্দার ঝুঁকিতে ইউরোপ। চলতি সপ্তাহে অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। কারণ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়েছে রাশিয়া।

দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রে ত্রুটি আছে। সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো- বিশ্বের শতাধিক দেশ নিষেধাজ্ঞা নীতির সঙ্গে একমত নয়, যা বিশ্ব জিডিপির ৪০ শতাংশ। রাশিয়ার তেল এশিয়ায় যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে আমিরাতের অনেক ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একটি বিশ্বায়িত অর্থনীতি ধাক্কা ও সুযোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সর্বশেষ খবর