দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারির কাছে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে স্বাক্ষরের জন্য পাঠায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ জন্য প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে সরকারের একটি অংশ।
জানা গেছে, আইনে যে সংশোধনীগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার একটিতে যে সব শিশুর বাবা-মায়ের হদিস জানা যায়নি তাদেরও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, নেপালি মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু যার বাবার পরিচয় জানা যায়নি তার মা সে বিষয়ে ঘোষণা দিলে ওই শিশুও নাগরিকত্বের নথি পাবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৫ সালের সংবিধান অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান ভাণ্ডারির জন্য ১৬ বছরের পুরনো নেপালের নাগরিকত্ব আইনের এ সংশোধনীগুলো অনুমোদনের সময়সীমা গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়ে যায়।ভাণ্ডারির সহযোগী ভেশ রাজ অধিকারী রয়টার্সকে বলেন, ‘সরকার ও পার্লামেন্ট তার উদ্বেগ আমলে না নেওয়ায় প্রেসিডেন্ট বিল অনুমোদন করেননি।’ আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পার্লামেন্টে দুবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হওয়া এই সংশোধনী প্রেসিডেন্টের অনুমোদন করা আবশ্যক ছিল। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বলরাম কে সি বলেছেন, আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান এ সংশোধনী অনুমোদন না করে সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘হয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পদত্যাগ করা উচিত না হলে সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।’ নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার সহযোগীরা জানিয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ক্ষমতাসীন জোটের শীর্ষ নেতারা গতকাল বৈঠকে বসেন। আগামী ২০ নভেম্বর নেপালের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনের রাজনৈতিক জোট নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা।
বিদ্যমান নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, একজন নেপালি পুরুষকে বিয়ে করেছেন এমন একজন বিদেশি নারী তার বিয়ের এবং অন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এমন প্রমাণপত্র দেখাতে পারলে নেপালের নাগরিকত্ব পেতে পারেন। নেপালের প্রধান বিরোধীদল কমিউনিস্ট পার্টির (সম্মিলিত মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট) জ্যেষ্ঠ নেতা সূর্য থাপা বলেছেন, ওই সংশোধনীতে অবশ্যই বিদেশি নারীদের নেপালের নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে ৭ বছর অপেক্ষা করার বিধান থাকা উচিত।
এর আগে গত বছর কয়েক মাস নেপালের পার্লামেন্টে অচলাবস্থা চলে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালের রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টির প্রধান কেপি শর্মা ওলির দল থেকে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি এমপি নেপালি কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ অচলাবস্থার সূত্রপাত হয়। পরে গত বছরের জুলাই মাসে শের বাহাদুরকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
