শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাতাসে বিষ ছড়ানোর খবর চেপে রেখেছে বড় তেল কোম্পানিগুলো

বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

বাতাসে বিষ ছড়ানোর খবর চেপে রেখেছে বড় তেল কোম্পানিগুলো

তেল ক্ষেত্রগুলোর অপ্রয়োজনীয় গ্যাস পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করা হয় -বিবিসি

বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো তাদের তেল ক্ষেত্রগুলো যে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিগর্মন করছে সে বিষয়টা প্রকাশ করছে না। এর ফলে কোটি কোটি টন বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়াচ্ছে। বিবিসি নিউজের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিবিসি জানতে পেরেছে, বিশ্বের প্রধান প্রধান তেল কোম্পানি বিপি, এনি, এক্সনমোবিল, শেভরন এবং শেল যেসব তেল ক্ষেত্রে কাজ করছে সেখান থেকে লাখ লাখ টন গ্যাস নির্গত হচ্ছে কিন্তু কোম্পানিগুলো এই তথ্য জানাচ্ছে না। তেল উৎপাদনের সময় উত্তোলন করা তেল থেকে যে বাড়তি প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হয়, যা উৎপাদনের কাজে লাগে না, তা পুড়িয়ে ফেলা হয়।

দোষ এড়িয়ে এই কোম্পানিগুলো বলছে, জ্বালানি তেল শিল্পের নিয়ম-বিধি মেনেই তারা তাদের তথ্য প্রকাশ করে থাকে। অব্যবহৃত যে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা হয়, তার থেকে বাতাসে নির্গত হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং কালো ধোঁয়ার মারাত্মক এক মিশ্রণ, যা বায়ুদূষণ ঘটায় এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত করে। আবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোই অনেক দিন ধরে স্বীকার করে আসছে, জরুরি কারণ ছাড়া সব রকম বাড়তি গ্যাস পোড়ানো বন্ধ করা প্রয়োজন।

ইরাকে যেসব তেল ক্ষেত্রে পোড়ানো গ্যাস চুল্লি থেকে বেরোচ্ছে, তার কাছাকাছি যেসব মানুষ বসবাস করে, সেখানকার বাতাসে বিবিসি উচ্চ মাত্রার এমন সব রাসায়নিক পেয়েছে, যার থেকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা রয়েছে। বিবিসির অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে, এই তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে উচ্চ মাত্রার অঘোষিত গ্যাস বায়ুম-লে পুড়ে মিশে যায়। এ খবরের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক বিশেষ দূত ডেভিড বয়েড এসব এলাকার মানুষদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘এগুলো হলো আধুনিক যুগের বলিদান অঞ্চল, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য, মানবাধিকার এবং পরিবেশকে বলি দেওয়া হচ্ছে মুনাফা আর ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে।’

বিপি, এনি, এক্সনমোবিল, শেভরন আর শেল কোম্পানি ২০১৫ সালে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিশ্রুতি মেনে অঙ্গীকার করেছিল তারা কতটা অবাঞ্ছিত গ্যাস পোড়াচ্ছে তা ঘোষণা করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া এভাবে গ্যাস পোড়ানো বন্ধ করে দেবে। শেল বলেছিল, তারা ২০২৫ সালের মধ্যেই এটা বন্ধ করবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যেসব ক্ষেত্রে তারা দৈনন্দিন পরিচালনার জন্য অন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, সেখানে এই পোড়া গ্যাস নিগর্মনের তথ্য প্রকাশের দায়িত্ব অন্য কোম্পানিগুলোর। এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান যত তেল উৎপাদন করে তার ৫০%, অর্থাৎ মূল উৎপাদনই হয় এ ধরনের তেল ক্ষেত্রগুলোতে।

কয়েক মাস ধরে গবেষণা চালিয়ে বিবিসি দেখেছে, যেসব তেল ক্ষেত্রে এ ধরনের গ্যাস নির্গমন-সংক্রান্ত তথ্য এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করছে না, সেখানে তাদের হয়ে আর কেউ এই তথ্য জানাচ্ছে না।

উপগ্রহ থেকে বাতাসে গ্যাস পোড়ানোর যে তথ্য বিশ্বব্যাংক সংগ্রহ করে, তা বিশ্লেষণ করে বিবিসি প্রত্যেকটা সাইটে গ্যাসের নির্গমন চিহ্নিত করেছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ‘আমরা হিসাব করেছি যে ২০২১ সালে এ ধরনের আগুন থেকে প্রায় ২ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়েছে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এই নির্গমন বছরে ৪৪ লাখ গাড়ি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের সমান।’

বিবিসি নিউজ অ্যারাবিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফ্লেয়ারিং’ বা অব্যবহৃত গ্যাস পোড়ানোর কারণে ইরাকে তেল ক্ষেত্রের কাছে থাকা বাসিন্দাদের কোন কোন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর