শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অবশেষে আনোয়ার ইব্রাহিম প্রধানমন্ত্রী

অবশেষে আনোয়ার ইব্রাহিম প্রধানমন্ত্রী

মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তিন দশক ধরে একটি আলোচিত নাম আনোয়ার ইব্রাহিম। ১৯৯০-এর দশকে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ২০১৮ সালে ‘অফিশিয়াল প্রাইম মিনিস্টার-ইন-ওয়েটিং’ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরা দিয়েও এত দিন ধরা দেয়নি। বরং এই সময় জেল-জুলুম আর নির্যাতনে কেটেছে। অবশেষে অধরা সেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার ধরা দিল আনোয়ার ইব্রাহিমের পায়ে। গতকাল দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর আগে জাতীয় নির্বাচনের পর দেশটিতে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, মূলত গতকাল তারই অবসান ঘটেছে।

উল্লেখ্য, শনিবারের জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল বা জোট সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে দেশটিতে নজিরবিহীন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট তৈরি হয়।

সরকার গঠনের জন্য আনোয়ার অথবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন তাদের কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার গঠনের জন্য সমঝোতায় পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয়। পরে রাজার পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তিনি নিজেই দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন এবং সবাই যাতে তাকে মেনে নেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে- রাজপ্রাসাদ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মালয়েশিয়ার সুলতানদের সঙ্গে পরামর্শ শেষে রাজা সুলতান আবদুল্লাহ আনোয়ার ইব্রাহিমকে দেশটির দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।’ আনোয়ারের পাকাতান হারাপান পার্টি পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হলেও সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। এখন তিনি কোন কোন দলকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করবেন সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

রাজনৈতিক জীবন : বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার বাগ্মী রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় লক্ষ্য অর্জিত হলো। তরুণ বয়সেই খুব দ্রুত তিনি দেশটিতে রাজনৈতিক তারকায় পরিণত হন। অনেকেই আশা করেছিলেন, তিনি হয়তো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। কিন্তু সে রকম ঘটেনি। অর্থনৈতিক সংকটকে ঘিরে ইব্রাহিম ও মাহাথিরের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে ইব্রাহিমকে কারাদন্ডও দেওয়া হয়। ৯ বছর জেলে থাকার পর ২০০৪ সালে তার সেই সাজা বাতিল করে দেয়। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে আবারও সমকামিতার অভিযোগ আনা হয় এবং ২০১৫ সালে তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে বিরোধিতা তীব্র হলে মাহাথির মোহাম্মদ তার অবসর জীবন থেকে রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সমঝোতা করেন। তারা দুজনে একত্রিত হয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে পরাজিত করেন। তার জের ধরে রাজা তাকে ক্ষমা করে দেন।

তাদের দুজনের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে বলা হয়, মাহাথির আনোয়ারের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন। কিন্তু ২০২০ সালেও প্রধানমন্ত্রীর পদ তার হাতছাড়া হয়ে যায়। এখন তিনি তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার সামনে এখন অর্থনৈতিক সংকট ও কভিড মহামারির মতো অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নিয়ে তাকে এখন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর