রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চীনের কভিডসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

চীনের কভিডসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

চীনে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় দেশটির কর্মকর্তাদের কভিডের রিয়েল-টাইম তথ্য নিয়মিত শেয়ার করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সম্প্রতি তাদের কঠোর কভিড বিধিনিষেধের বেশির ভাগই তুলে নিয়েছে; এরপর সেখানে প্রাণঘাতী ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কারণে অনেক দেশ এখন চীন থেকে প্রবেশ ইচ্ছুক ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।

ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চীনে কভিডে হাসপাতালে ভর্তি, নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা ব্যক্তিদের সংখ্যা ও মৃত্যু দেখতে চাইছেন। তারা টিকাদানের হারসংক্রান্ত তথ্যও চেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। চীন থেকে ফের করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইতালি, জাপান ও তাইওয়ান শনাক্তকরণ পরীক্ষা ছাড়া চীন থেকে দেশগুলোতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ইংল্যান্ডও চীন থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের বিমান ওঠার আগেই শনাক্তরণ পরীক্ষার নেগেটিভ ফলের সনদ দেখাতে বলেছে। চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর দেওয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা বলেছে, ‘মহামারি পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট ও রিয়েল-টাইম তথ্য নিয়মিতভাবে দিতে অনুরোধ করছে। কী পরিমাণ টিকা আছে, টিকা দেওয়ার পরিমাণ কেমন, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন ও ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে টিকা দেওয়ার হার সম্বন্ধে তথ্য দেওয়া উচিত তাদের।’ এসব বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহ ব্যক্ত করার পাশাপাশি ডব্লিউএইচওর অন্য দেশের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের যে কুণ্ঠা, তা কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করতে চেয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের এ সংস্থার প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা পর্ষদ কভিড-১৯ এর বিবর্তন নিয়ে বৈঠকে বসছে, সেখানে ভাইরাল সিকুয়েন্সিং নিয়ে তথ্য উপস্থাপনে চীনা বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। বোধগম্য কারণেই কিছু দেশ চীন থেকে যাওয়া যাত্রীদের ওপর নতুন বিধিনিষেধ দিচ্ছে, বলেছে ডব্লিউএইচও।

মহামারি পরিস্থিতি চীনের সরকার যেভাবে সামলাচ্ছিল তাতে অসন্তুষ্ট অনেক নাগরিকের নভেম্বরের বিক্ষোভের পর বেইজিং একে একে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখার বিধিনিষেধ তুলতে শুরু করে। তার আগ পর্যন্ত চীন বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছিল, যা বিশ্বজুড়ে ‘শূন্য কভিড’ নীতি নামে পরিচিতি পেয়েছিল। ওই নীতির মধ্যে কোনো এলাকায় অল্প কয়েকজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলেই দেওয়া হতো কঠোর লকডাউন, শুরু হতো গণহারে শনাক্তকরণ পরীক্ষা। যাদের দেহে কভিড মিলত তাদের ঘরে আইসোলেশনে বা সরকারি স্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এখন সব লকডাউন বিধি তুলে নেওয়া হয়েছে, কোয়ারেন্টিনের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। দেশটির লোকজন এখন অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারছে। এ সুযোগে সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে শুরু করে; চীন এখন প্রতিদিন ৫ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, আক্রান্তদের অনেকেই সরকারের রাডারের বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাদের হিসাবে চীনে এখন প্রতিদিন ১০ লাখের কাছাকাছি রোগী আক্রান্ত হচ্ছে। কভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞা বদলানোর পর চীনের কর্মকর্তারা ডিসেম্বর মাসজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মাত্র ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য তথ্য প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটি বৃহস্পতিবার বলেছে, চীনে এখন প্রতিদিন কভিডে ৯ হাজারের মতো মানুষ মারা যাচ্ছে বলে তাদের অনুমান।

সর্বশেষ খবর