ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিস্ফোরক যন্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে, যেটি কয়েক সপ্তাহ আগেই লুকিয়ে রেখেছিল ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ! হানিয়াকে হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে আগে থেকেই জানা একটি সূত্র সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজশেকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার তেহরানে গিয়ে গেস্ট হাউসের যে অংশে হানিয়া ছিলেন, সেখানেই বসানো হয়েছিল বোমাটি। গভীর রাতে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ইরান প্রশাসনের অন্দরে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থার ‘জাল’ কতটা বিস্তৃত, মঙ্গলবারের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমটির দাবি। ‘রেভলিউশনারি গার্ড’ বাহিনীর দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মোসাদ ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাকরিহজাদেহকে নিখুঁতভাবে রিমোট কন্ট্রোল মেশিনগানের সাহায্যে হত্যা করেছিল। হানিয়াকে খুন করা হলো রিমোট কন্ট্রোল বোমার সাহায্যে।ইরান সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, হানিয়া ওই ভবনের যে অংশে ছিলেন, বিস্ফোরণের অভিঘাতে তার জানালা এবং একটি দেওয়ালের অংশ ধসে পড়েছে। কিন্তু মূল ভবনটি অক্ষত রয়েছে। যার অর্থ, সেখানে বাইরে থেকে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানেনি। সূত্রটি জানিয়েছে, হত্যাকান্ডের পরপরই ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযান সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বুধবার বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রিয় অতিথিকে হত্যা করেছেন এবং আপনাদের কঠিন শাস্তির পথ প্রশস্ত করেছেন।’
হানিয়ার মৃত্যু কৌশলগত এবং প্রতীকী, উভয়ভাবেই হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তার হত্যাকান্ড গাজায় জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য স্থবির আলোচনা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধানের ভূমিকা পালন করছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
উল্লেখ্য, হানিয়ার তিন পুত্র- হাজেম, আমির আর মহম্মদ তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। সেই সময় ইসরায়েল বিমান হানা চালায়। একটি গাড়িতে চেপে তারা কয়েকজন যাচ্ছিলেন। সেই গাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হামাস জানিয়েছে, হানিয়ার চার নাতি, তার মধ্যে তিনজন মেয়ে ও একটি ছেলেকে হারিয়েছেন।
হানিয়ার হত্যা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য সহায়ক নয়-বাইডেন : গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় শীর্ষ আলোচক ছিলেন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি। চলমান আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হানিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনা গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য সহায়ক নয়।
ইতোমধ্যে গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য চলমান আলোচনাকে স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর পরিসরে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, হানিয়ার হত্যাকান্ড যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট করেছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির আলোচনার স্বস্তিকর নয়। বাইডেন আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত হানিয়া হত্যার কোনো দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল। তবে নেতানিয়াহুর সরকার বলছে, হামাস এবং লেবানন-ভিত্তিক হিজবুল্লাহসহ সাম্প্রতিক সময়ের সব হুমকিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে যে কোনো আক্রমণের জন্য জোরপূর্বক জবাব দেবে তারা।