সত্য কখনো চাপা থাকে না। সত্যের এমন শক্তি, সব শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে সে আলোর দিকে আসবেই। তবে বেশির ভাগ সময়ই প্রকৃত সত্য সামনে আনতে কাউকে না কাউকে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এর পরই আসে বিজয়। সে রকমই একটি ঘটনা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘটনার সততা উদ্ঘাটন সাংবাদিকতার ইতিহাসে চিরকাল জ্বলজ্বল করবে। গতকাল ছিল সেই দিন।
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির উৎপত্তি ১৯৭২ সালে। যখন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন পুনর্র্নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার কাছে জোরালো নির্বাচনি প্রচার অপরিহার্য বলে মনে হয়েছিল। তাই তাঁরা অবৈধ গুপ্তচরবৃত্তির সুযোগ নেন। নিক্সনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য (ব্যঙ্গাত্মকভাবে ক্রিপ নামে পরিচিত) ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির ওয়াটারগেট সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তাঁরা গোপনীয় নথির কপি চুরি করেন এবং অফিসের ফোনে আড়ি পাতার যন্ত্র স্থাপন করেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির খুঁটিনাটি উন্মোচনের জন্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড এবং কার্ল বার্নস্টেইনের অনেকাংশে কৃতিত্ব প্রাপ্য। এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁদের পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগ তথ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে এসেছিল। ২০০৫ সালে জানা যায়, তিনি ছিলেন এফবিআইয়ের প্রাক্তন সহযোগী পরিচালক ডব্লিউ মার্ক ফেল্ট। মূলত ওয়্যারট্যাপগুলো সঠিকভাবে কাজ না করায় ওই বছরের ১৭ জুন পাঁচ চোরের একটি দল ওয়াটারগেট ভবনে ফের প্রবেশ করে। নতুন মাইক্রোফোন নিয়ে যখন অফিসে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এক নিরাপত্তারক্ষী লক্ষ্য করেন, কেউ একজন ভবনের দরজার তালা ট্যাপ দিয়ে আটকে রেখেছে। প্রহরী পুলিশকে ফোন করলে তাদের হাতেনাতে আটক করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় আড়ি পাতার যন্ত্র আর ২ হাজার ৩০০ ডলার।
চোরেরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জড়িত কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও গোয়েন্দারা চোরদের জিনিসপত্রের মধ্যে হোয়াইট হাউসের ফোন নম্বরের অনুলিপি পাওয়ার পর সন্দেহ তৈরি হয়। এ ঘটনায় রিপাবলিকান প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনকে ঘিরে গণমাধ্যমের সন্দেহ শুরু হয়। তবে আগস্টে দেওয়া এক বক্তৃতায় নিক্সন বলেন, ‘এ ঘটনায় তিনি বা তাঁর দলের কেউ জড়িত নন। এসব অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র।’ বেশির ভাগ ভোটার তাঁকে বিশ্বাস করেন এবং ১৯৭২ সালের নভেম্বরে বিশাল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তবে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইন, ট্রায়াল বিচারক জন জে সিরিকা ও সিনেটের তদন্ত কমিটির সদস্যসহ কয়েকজন নিক্সনকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। তাঁদের তদন্তে বেরিয়ে এলো অনুপ্রবেশকারীরা মোট চারবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বেনামি হুইসেলব্লোয়ার ‘ডিপ থ্রোট’ উডওয়ার্ড এবং বার্নস্টেইনকে মূল তথ্য সরবরাহ করেছিল। পরে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন নিক্সন।