ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফের আলোচনার কাঠি নড়াচড়া শুরু করছে। গাজায় ১০ মাসের বেশি সময় অবিরাম ইসরায়েলি হামলার পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে গতকাল নতুন দফায় আলোচনার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় গেছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান। বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা।
গত ৯ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি এবং কাতারের আমির আল থানির এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরায়েলে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। সেই বিবৃতিতেই আলোচনার দিন স্থির করা হয়েছিল এবং আলোচনা কায়রো কিংবা দোহায় হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের। গত বছর নভেম্বর থেকেই এই তিন দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করে আসছে। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের মধ্যে গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড বার্নেয়া, দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বার এবং সেনাবাহিনীর জিম্মি বিষয়ক প্রধান নিটজান আলোন রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস এবং মধ্যপ্রাচ্য দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক বৈঠকে যোগ দেবেন। এ ছাড়া মিসরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল দোহায় উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরকে দোষারোপ করলেও বৈঠকের আগে উভয় পক্ষই কোনো চুক্তির সম্ভাবনাকে একেবারে নাকচ করেনি। ইসরায়েলি আলোচনাকারী দলের এক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নমনীয়তার সুযোগ রেখেছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো উপসংহার টানা এবং জিম্মি মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তি করার লক্ষ্য নিয়েই এ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গাজায় হামাস যোদ্ধাদের হাতে এখনো ১১০ জিম্মি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ৩১ মে বাইডেনের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে দোহার বৈঠকে আলোচনা হবে- এমনটিই যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিল মধ্যস্থতাকারীরা।
ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর আলোচনা! : মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অন্যতম কূটনৈতিক ‘সঙ্গী’ ইসরায়েল। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট। তাতে শক্তিশালী প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই ভোটের আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করছেন গাজা প্রসঙ্গে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমেরিকার রিপাবলিকান শিবিরের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি নেতানিয়াহুর।
গাজায় নিহত ৪০ হাজার ছাড়াল : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার ছাড়াল। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। বিবিসি জানায়, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৭ শতাংশ। যুদ্ধ শুরুর আগে মোট ২৩ লাখ মানুষের আবাস্থল ছিল গাজা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত আহত হয়েছে ৯২ হাজার ৪০১ জন ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার পরিসংখ্যানে বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য দেখায় না।