রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে সব দিক থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। সম্প্রতি মার্কিন কিছু অস্ত্রের কারণে মস্কোকে পাল্টা আঘাত করে রণক্ষেত্রের ছবি বদলে দিয়েছে কিয়েভ। কয়েকদিন আগেই রাশিয়ার চাপ বাড়িয়ে ইউক্রেনের হাতে আসে আমেরিকার বেশ কয়েকটি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান। কিন্তু রুশ হামলায় যুদ্ধের মোর ঘোরানো এই হাতিয়ারের একটি ধ্বংস হয়ে গেছে! শুধু তাই নয়, নিহত হয়েছেন এফ-১৬ এর পাইলটও।
গত সোমবার রাশিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বৈমানিক ওলেকসি মেস নিহত হয়েছেন বলে জানায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দাবি, শত্রুপক্ষের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত যুদ্ধবিমানটি ভূপাতিত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ নয়। সোমবার আকাশপথে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হামলার সময় যুদ্ধবিমানটির বৈমানিক তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ড্রোন ধ্বংস করেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যত দিন যাচ্ছে আরও ভয়ংকর হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবারই ইউক্রেনের আক্রমণের বদলা নিতে ফের কিয়েভে ভয়ংকর হামলা চালায় একঝাঁক রুশ ড্রোন। বিবিসি জানায়, ওই দিনই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-১৬ ফাইটার জেট। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে দুই দেশের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের। এই দীর্ঘ সময়ে বহুবার ইউক্রেনকে বড় অঙ্কের সামরিক সাহায্য করেছে আমেরিকা। এবারও কিয়েভকে অত্যাধুনিক ফাইটার জেট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল হোয়াইট হাউস। সেই মতো কয়েকদিন আগেই এফ-১৬ বোমারু বিমানগুলোর প্রথম ব্যাচ হাতে পায় ইউক্রেন। এর মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে গেল রাশিয়ার আক্রমণে। ফলে চাপ বেড়েছে ইউক্রেনীয় সেনার।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফাইটার জেটগুলো যে কোনো আবহাওয়ায় শত্রুপক্ষের ওপর আঘাত হানতে পারে। রাশিয়ার ড্রোন হানার মোকাবিলা করতে বহুদিন ধরে শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলো হাতে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল ইউক্রেন। তার জন্য পাইলটদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। সমর বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিমানগুলো মস্কোর অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। তাই তারা চেষ্টা চালাচ্ছে এগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার।
উল্লেখ্য, মাটি কামড়ে রণক্ষেত্রে লড়াই করছে ইউক্রেনীয় সেনা। গত তিন সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ভয়ানক অভিযান চালাচ্ছে কিয়েভ। তবে রাশিয়া বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে বরং সরাসরি কিয়েভে হামলা চালাচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক যুদ্ধবিমান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্তু ইউক্রেনের বন্ধু দেশগুলো তাদের মিগ বিমানই দেয়, যেগুলো চালাতে ইউক্রেনের পাইলটরা অভ্যস্ত। গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের পাইলটদের ইউরোপে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ : জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চালাতে চায়। বেয়ারবক বলেন, সম্প্রতি তারা ইউক্রেনের হিটিং ও পানি সরবরাহ পরিকাঠামোতে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য, ইউক্রেনের মানুষ যেন শীতের সময় ঠান্ডায় জমে মারা যান। বেয়ারবকের অভিযোগ, পুতিন আরও বড় আকারে এই ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চালাতে চাইবেন। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন ইউক্রেনকে নতুন প্রোটেকটিভ শিল্ড দেয়। তিনি বলেছেন, জার্মানি ইউক্রেনকে এ বছরের শেষের দিকে চারটি আইআরআইএস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং অতিরিক্ত বিমান-বিধ্বংসী কামান দিতে চায়। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম থাকলে ইউক্রেন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে।