পারমাণবিক স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ। তা নিয়ে বিভিন্ন দেশ নানা গবেষণা চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে ফিনল্যান্ড। বনের ভিতরে ৪০০ ফুট মাটির নিচে বিশ্বের সর্বপ্রথম স্থায়ী ‘পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগার’ নির্মাণের শেষপ্রান্তে দেশটি। মাটির নিচে বানানো এই গর্তে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিরাপদে থাকবে অন্তত ১ লাখ বছর! ২০২৬ সাল থেকেই এই সংরক্ষণাগার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় ব্যয়িত পারমাণবিক জ্বালানির বর্জ্য পানিরোধী তামার ক্যানিস্টারে ভরে দক্ষিণ-পশ্চিম ফিনল্যান্ডের বনাঞ্চলের ৪০০ মিটারেরও বেশি নিচের শিলাস্তরে জমা হবে।
ফিনল্যান্ডের এই পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রটির নাম ‘অংকালো’, ফিনিশ ভাষায় যার অর্থ গর্ত। হেলসিঙ্কি থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে অলকিলুয়োতো দ্বীপের তিনটি পারমাণবিক চুল্লির পাশেই এই সংরক্ষণাগার অবস্থিত। ফিনল্যান্ডের এই যুগান্তকারী প্রকল্পটির কাজ দেখাশোনা করছে ‘পোসিভা’ নামের একটি কোম্পানি। ফিনল্যান্ডের এ প্রতিষ্ঠানটি পারমাণবিক শক্তি সংস্থা টিভিও এবং ইউটিলিটি কোম্পানি ফোর্টাম-এর যৌথ মালিকানাধীন।
মূলত অংকালো প্রকল্পটি হলো ব্যবহৃত জ্বালানির জন্য একটি ক্যাপসুলেশন প্ল্যান্ট এবং এটি সাময়িক নয়, এটি চিরস্থায়ী- পোসিভার যোগাযোগ প্রধান পাসি তুহিমা সিএনবিসিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেন। তুহিমা বলেন, প্রথমবারের মতো নির্মিত এই ভূ-তাত্ত্বিক নিষ্পত্তি সুবিধাটি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অংশীদারদের কাছ থেকে ব্যাপক আগ্রহ পেয়েছে।
২০২১-এর মাঝামাঝি থেকে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু অংশে চলা জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এটিকে পারমাণবিক ‘পুনর্জাগরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবহৃত জ্বালানির বর্জ্য নিষ্পত্তির সমাধান পাওয়া ছিল পারমাণবিক শক্তির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে যে কেউ কি পারমাণবিক বর্জ্যরে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে এবং পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের পরিসীমা কী হওয়া উচিত জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে
এদিকে ফিনল্যান্ডের জলবায়ু মন্ত্রী কাই মিক্কানেন বলেন, এটি দেখানোর একটি চমৎকার উদাহরণ যে, একটি ছোট দেশও বিশ্বের বড় সমস্যার সমাধান দিতে পারে। গত ১০ বছরে আমরা দেখেছি, ইউরোপের সবুজ চুক্তির জন্য পারমাণবিক শক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর যদি আমরা এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ফসিল ফুয়েলের ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে চাই, তাহলে পারমাণবিক শক্তির ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
পোসিভা ফিনল্যান্ডে পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, তা হলো মাটির নিচে গভীর টানেলে বড় বড় ধাতব ক্যানিস্টারে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাখা। এ টানেলগুলোতে পৌঁছাতে হলে প্রায় ৫ কিলোমিটার হাঁটতে হবে।
টানেলের গায়ে বিশেষ ছিদ্র করে সেখানে ৩২৫০টি ক্যানিস্টার স্থাপন করা হবে, যা প্রায় ৬৫০০ টন ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম ধরে রাখতে সক্ষম। ক্যানিস্টারগুলো শুকনা এবং সুরক্ষিত রাখতে এগুলোকে বেন্টোনাইট নামক এক ধরনের শোষক পদার্থ দিয়ে মোড়ানো হবে। সব ক্যানিস্টার স্থাপনের পর টানেলের প্রধান প্রবেশপথ রাবার ও কংক্রিট দিয়ে সিল করে দেওয়া হবে।
১০০ বছরের মধ্যে এই সংরক্ষণাগারটি পূর্ণ হলে একে সিল করে মাটির ওপরে সব চিহ্ন মুছে ফেলা হবে। পোসিভার কর্মকর্তা পজোনেনে বলেন, বর্জ্যগুলো মাটির নিচে ১ লাখ বছর সুরক্ষিত থাকবে।