ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এবার যুদ্ধ বিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে লাখো ফিলিস্তিনি। মূলত গাজার বন্দিশিবিরে আরও ছয়জন বন্দির লাশ পাওয়ার পর দেশটির প্রধান শ্রমিক ইউনিয়নও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের মতে, প্রায় ৫ লাখ মানুষ জেরুজালেম, তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে আন্দোলন করছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে অবশিষ্ট পণবন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে।
জেরুজালেম শহরে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শ্রমিক নেতারা গতকাল দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই! এখনই!’ স্লোগান দিতে দিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের সামনে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার এবং বাকি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। নেতানিয়াহুর কাছে তাদের দাবি, তিনি যেন বাকি ১০১ জন বন্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমান অনুযায়ী, হামাসের কাছে এখনো ১০১ জন জিম্মি আটক রয়েছেন। তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সম্ভবত মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও একাধিক আঞ্চলিক শক্তির জোরালো উদ্যোগ সত্ত্বেও এখনো ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তারই মধ্যে গাজার দক্ষিণে রাফা শহরের এক সুড়ঙ্গের মধ্যে ছয়জন পণবন্দির লাশ উদ্ধারের ঘটনার জেরে ইসরায়েলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এক ফরেনসিক পরীক্ষা অনুযায়ী জিম্মিদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় তারা সবাই জীবিত ছিলেন। যখন ইসরায়েলি বাহিনী সুরঙ্গের ভিতর জিম্মিদের কাছাকাছি যায় তখন হামাস কর্মীরা জিম্মিদের হত্যা করে পালিয়ে যান।
দেশে-বিদেশে প্রবল চাপ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রায় ১১ মাস পরেও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। ইসরায়েলের ওপর হামলা ও জিম্মি নাটকের সব দায়িত্বপ্রাপ্তদের না ধরা পর্যন্ত তিনি কোনো বিরতির সম্ভাবনা দেখছেন না। তার মতে, যারা জিম্মিদের হত্যা করে তারা মোটেই কোনো রফা চায় না। উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর অবস্থানের বিরোধিতা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টও হামাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। গতকাল অনেক ইসরায়েলি তেল আবিবে রাস্তা অবরোধ করেন এবং পশ্চিম জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বাইরেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, তেল আবিবের প্রধান মহাসড়ক বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে পূর্ণ, যারা নিহত বন্দিদের ছবি সংবলিত পতাকা ধরে আছেন। ইসরায়েলি টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, রাস্তায় অবরোধ তৈরি করা বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ জলকামান ব্যবহার করছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির ৮ লাখ সদস্যের শ্রমিক সংগঠন হিসটাদ্রুত এর চেয়ারম্যান আমোন-বার ডেভিড বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তির পরিবর্তে বডি ব্যাগ পাচ্ছি।’ এর প্রতিবাদে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬.০০টা থেকে এক দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের আহ্বান জানান।