আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় সাধারণ নির্বাচনের পর বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল। বুধবারের নির্বাচনের পর টানা তিন দিনের বিক্ষোভে অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। বিরোধী দল চাদেমার মুখপাত্র এক ফরাসি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘প্রায় ৭০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।’ অন্যদিকে বিবিসিকে এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যুর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।
সরকার পরিস্থিতি খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বিক্ষোভ দমন করার লক্ষ্যে প্রশাসন কারফিউয়ের সময়সীমা আরও বাড়িয়েছে। মূলত তরুণরা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজধানী দারুস সালামসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ‘দুর্বল’ করেছে। প্রধান বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু এখন কারাগারে। আরেকজনকে প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি, যা প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান ও তার দল চামা চা মাপিনদুজি (সিসিএম)-এর জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়েছে। শুক্রবারও দারুস সালামে সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ হয়েছে। তানজানিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত দাবি করেছেন, ‘কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি।’ বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশজুড়ে ভাঙচুরের খবর পাচ্ছি। ইন্টারনেট বন্ধের উদ্দেশ্য ছিল এই ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানো এবং প্রাণ বাঁচানো।’ বিবিসি জানিয়েছে, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের জন্য মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা জানাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। দারুস সালামের একটি হাসপাতালের সূত্র বিবিসিকে জানায়, বৃহস্পতিবার থেকেই তারা নিহত ও আহতদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। শহরের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালের মর্গ ভর্তি হয়ে আছে। চাদেমার এক নেতা দাবি করেন, ‘মানুষের চোখের আড়ালে রাতের অন্ধকারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে।’ চাদেমার পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিচালক জন কিটোকা বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের নেতাদের খুঁজে বের করছে; কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তারা বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছে।’ বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘ তানজানিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা ও সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট সামিয়া হাসান : দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সামিয়া সুলুহু হাসানকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সামিয়া হাসান নির্বাচিত হয়েছেন।
ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিনডুজি (সিসিএম) দলের হয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করেন সামিয়া। বুধবারের ভোটে ৯৭.৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটি তানজানিয়ার ইতিহাসে অভূতপূর্ব নির্বাচনি ফলাফল। তবে, এ নির্বাচন বিতর্কিত বলে ইতোমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে। -বিবিসি ও আলজাজিরা