রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আমার দেখা বঙ্গবন্ধু

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

আমার দেখা বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৬৬ সালের ৮ এপ্রিল। ৬ দফার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রচারণায় এদিন পাবনা টাউন হলে আয়োজিত একটি জনসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। ৬ দফাকে স্বাধীনতার সিঁড়ি ভাবতেন জাতির পিতা। বলতেন- ‘৬ দফায় যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৫ কোটি শোষিত-বঞ্চিত আদম সন্তানের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’ অধিকার আদায়ের এ চিন্তা থেকেই ৬ দফার আন্দোলন দেশব্যাপী প্রচার করতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। সেই ধারাবাহিকতায় পাবনায় (টাউন হল) সমাবেশ করতে আসা। তার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমার চাচা আবদুর রব বগা মিয়ার বাসায় দুপুরের খাবার খেলেন। সেখানেই জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলাম। বগা চাচা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মী এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ আদরের ‘তুই’ সম্বোধন করে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন। সর্বশেষ বললেন, ‘মাঠে (জনসভার ময়দান) আয়।’ সদ্য এসএসসি পাস করেছি। রাজনীতির কতটুকুই বা বুঝি? কিন্তু ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি দীর্ঘদেহী এই মানুষটির স্নেহমাখা ‘মাঠে আয়’ স্বরে কী যেন লুকিয়ে ছিল। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম-কেউ না নিলেও একাই যাব। কিন্তু সেটি আর করতে হলো না। সবার সঙ্গেই টাউন হলের জনসভায় গেলাম। বঙ্গবন্ধু ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শুনলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, মনের অজান্তেই মুগ্ধ শ্রোতা থেকে গগণবিদারী স্লোগানদাতা হয়ে গেছি। মাধ্যমিকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুপ্রাণিত ছিলাম। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে আমি যেন তাঁর ছাত্রলীগের অন্যতম সক্রিয় কর্মী। সেই সক্রিয় প্রবেশ কিছুক্ষণ আগেই বঙ্গবন্ধুর ‘মাঠে আয়’ নির্দেশের মধ্য দিয়ে ঘটল। মূলত রাজনীতিতে আমার সক্রিয় ভাবটা ওই মুহূর্ত থেকেই। ওই সাক্ষাৎ আমাকে এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের জিএস, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালনে উৎসাহ জুগিয়েছে; তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাবনার সেই ৮ এপ্রিল ১৯৬৬-এর পর বেশ কয়েকবার নাতিদীর্ঘসময় বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। যতবার দেখা হয়েছে, ততবারই তাঁর কাছ থেকে নতুন কিছু শিখেছি। বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন ৪৫ বছর আগে। দীর্ঘ এ সময়ে স্বৈরশাসন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন এবং ওয়ান-ইলেভেন এসেছে। রাজনৈতিক জীবনেও অনেক উত্থান-পতন দেখেছি, কত কিছু শিখেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে থাকার সেই মুহূর্তগুলো ভুলতে পারিনি। জীবদ্দশায় পারবও না।

২.

ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২। বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে কাশিনাথপুর/নগরবাড়ীতে ‘মুজিববাঁধ’ উদ্বোধন করতে আরেকবার পাবনা আসেন জাতির জনক। আমি তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বভাবতই জনসভার স্বাগত বক্তব্যের দায়িত্ব আমার ওপর পড়ল। বক্তৃতা শেষে মঞ্চ থেকে যখন মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েছি, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আমার হাত ধরে ফেললেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন-‘তুই তো ভালো বলিস’। বঙ্গবন্ধুর বুকে লেপ্টে আছি; কী বলব কী বলা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না। মুহূর্তের জন্য হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম জাতির পিতার দিকে। পরে দু-একটি কথা বলে স্টেজের পাশে গেলাম। পরে এই ভেবে আনন্দিত হলাম যে, মাত্র ১৮ মিনিট বক্তৃতায় যিনি ৭ কোটি মানুষকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন, লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছেন; সেই মানুষটি যখন আমার ভাষণের প্রশংসা করলেন, তখন সেটা নিঃসন্দেহে ছোট ব্যাপার নয়।

বঙ্গবন্ধুকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের মধ্য দিয়ে যথারীতি অনুষ্ঠান শেষ হলো। তিনি হেলিকপ্টারে ওঠার সময় আমার কাছে জানতে চাইলেন-ঢাকা যাব কি-না? আগে-পাছে চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলাম। প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার ভ্রমণের সুযোগ হলো, তা-ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। ঢাকায় হেলিকপ্টার থামল পুরাতন বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন-‘ওকে (আমাকে) বাসায় নিয়ে খেতে দাও, তারপর খরচ দিয়ে পাবনা পাঠিয়ে দিও।’

১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরেকবার পাবনা আসেন বঙ্গবন্ধু। জনসভার আয়োজন তখন স্টেডিয়ামে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সেবারও বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হলো। বক্তৃতা শেষে বঙ্গবন্ধু ঠিক পূর্বের ন্যায় আমাকে জড়িয়ে ধরেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন, আমি যেন ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করি। এ জন্যই বলি, ১৫ আগস্ট আমার কাছে শোক দিবস তো বটেই, সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত এক বেদনাবিধুর হৃদয় ভাঙার দিনও।

৩.

১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল। দলীয় কোন্দলের জেরে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে কোহিনুরসহ ৭ ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম ছিলেন তখন ঢাকার পুলিশ সুপার। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান নিজে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। বিষয়টি তিনি (মাহবুব উদ্দিন) তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) ই এ চৌধুরীকে অবহিত করলে তাৎক্ষণিক তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু তখন মস্কোতে চিকিৎসাধীন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ এই সহচর (মনসুর আলী) সাহসিকতার সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। সিনিয়র কেবিনেট কলিগের সঙ্গে পরামর্শ করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেন তিনি।

পরদিনই (৫ এপ্রিল) শফিউল আলম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা কলেজের বিপরীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ‘সীতারাম মিষ্টান্ন ভান্ডার’ থেকে। পর্যায়ক্রমে অন্য আসামিরাও গ্রেফতার হয়। সে সময় পাবনা জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমিই প্রথম বিবৃতি দিয়ে এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। পরে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু ও সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনও আমার পথে হাঁটে। প্রধানকে গ্রেফতারে অভিনন্দন জানানোয় মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পাবনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে বিলুপ্ত করে; যা পরদনি ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চিকিৎসা শেষে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে তাঁকে সব ঘটনা জানানো হয়। পুরো বিষয়টি জানার পর ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সিনিয়র মন্ত্রীদের সাধুবাদ জানান বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয়, সে সময় প্রধানের মুক্তি দাবিতে অনশনরত ছাত্রলীগ কর্মীদের আধা ঘণ্টার মধ্যে অনশন ভাঙার নির্দেশ দেন। অনশন না ভাঙলে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। বাধ্য হয়ে তারা অনশন ভাঙেন। অবশ্য জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দন্ডপ্রাপ্ত এই শফিউল আলমকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তার পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন তো সবারই জানা।

এদিকে আমার জেলা ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ ও বিধ্বস্ত ছিলাম। বিষয়টি সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রায় এক মাস পর অর্থাৎ চুয়াত্তরের মে মাসে প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ পেলাম। সহায়তা করলেন শ্রদ্ধেয় এম মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধু সেদিন রমনা পার্কের গেট ও বেইলি রোডের মুখে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় ভবন ‘সুগন্ধা’য় অবস্থান করছিলেন। আমরা সেখানে সকাল ৯টায় পৌঁছি। তোফায়েল আহমেদ তখন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব। বলে রাখা ভালো, দেশে তখন তথাকথিত মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছিল। সেই দুর্ভিক্ষকে ঘিরে জাহাজযোগে দেশ-বিদেশ থেকে ত্রাণ আসছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা দুটি জাহাজ ডুবে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। এটা আন্দাজ করতে পেরেই তোফায়েল আহমেদ সেদিন কথা না বলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আমরাও চলে আসতে উদ্যত হই। ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আমাদের ডাক দেন। তিনি তখন বারান্দায় থাকা বেতের চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।

যাই হোক, আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে এগিয়ে গেলাম। জাহাজ ডুবে যাওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু কথা বলার পর আসার মূল কারণ জানতে চাইলেন। পরে কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার খবরটি তাঁকে সবিস্তারে জানাই। বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলেন-‘ছাত্রলীগ কার?’ হতবিহ্বল অবস্থায় বললাম, আপনার। তিনি আমাদের বললেন-তোরা পাবনায় ফিরে যা এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম কর। আমি দেখব কে তোদের বিরত করে? বলাবাহুল্য, এরপর আমাদের জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রমে আর কোনো বাধা আসেনি। সে ধারাবাহিকতায় পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতিও হয়েছিলাম আমি।

১৯৭৫ সালের জুন মাসে বাকশাল গঠন হয়। উদ্দেশ্য- দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বলা যায় আর্থ-সামাজিক মুক্তিই ছিল এর উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে প্রথমে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পরে জেলা গভর্নরসহ জেলা কমিটিগুলো গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য হওয়ায় তিনি আমাকেও এর সদস্য করেন। পদায়ন করেন পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন এখানকার সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু স্বহস্তে প্রণয়ন করেছিলেন এই কমিটির তালিকা, পরে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর মুখে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আমার নামটি লেখার গল্প শুনেছিলাম। কমিটি গঠনের পর জেলা বাকশালের সম্পাদক ও ৫ যুগ্ম-সম্পাদক মিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডস্থ বাসায়। জাতির জনকের স্বভাব ড্রেসকোড ‘হাফ-শাটর্’ ও ‘লুঙ্গি’ পরেছিলেন। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুকে আমার শেষ দেখা। এই সাক্ষাতের দুই মাস পরেই যে তিনি চলে যাবেন, কে জানত সেটা? যাই হোক, ভবনে ঢুকে বঙ্গবন্ধুকে সালাম দিলাম। বাকশাল কমিটিতে স্থান দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। তিনি আমাদের নানা দিকনির্দেশনা দিলেন। চলে আসব, ঠিক এই মুহূর্তে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। বললেন-‘কীরে, আমার সাথে তো ছবি না তুলে কেউ যায় না; তোরা কেন যাস।’ তাৎক্ষণিক ক্যামেরাম্যান ডাকলেন। ফটোবন্দী হলাম রাজনীতির কবির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে নেওয়া সেই ছবি আজও আমি আগলে রাখছি। কারণ, তাঁর কাছ থেকে পাওয়া এটাই আমার সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্ন!

৪.

১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হলে আমি ও পাবনা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বিশাল এক মিছিল নিয়ে জেলা শহর প্রদক্ষিণ করি। আমি, বেবি ইসলাম, রফিকুল ইসলাম বকুল, ফজলুল হক মন্টু, আবুল কালাম আযাদ, রেজাউল রহিম লালের নেতৃত্বে অস্ত্র সংগ্রহ করে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সামরিক আইনের ৭ ধারায় (সন্দেহভাজন) হিসেবে ডিএসপি মো. শামসুদ্দিন আমাকে গ্রেফতার করে, গ্রেফতারকারী সেই কর্মকর্তা ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা ব্যাচ (১৯৭৩) থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত।

গ্রেফতারের পর জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমদিকে কোনো এক গভীর রাতে জেলখানা থেকে চোখ বেঁধে বালুর ট্রাকে করে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় নির্যাতন। সেই নির্যাতনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ডিএসপি কংশধর তরফদার। জেল থেকে বের হয়ে পরিবারের সব সদস্যের আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে আমিও দুর্বল হয়ে যাই। ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলি বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক জীবন।

অন্নদাশঙ্কর রায় লিখে গেছেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা/গৌরী, যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।’ আমিও বলি, বহমান নদীর মতোই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কীর্তি-স্মৃতি রয়েছে অমর হয়ে। তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর