রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

‘বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন’ স্থায়ী করতে চাই ‘সুশাসনের চুক্তি’

হাসানুল হক ইনু

‘বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন’ স্থায়ী করতে চাই ‘সুশাসনের চুক্তি’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর ঐক্যের ভেলায় চড়ে, ১৪ দল ও মহাজোটের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার হাত ধরে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধুর স্বমহিমায় স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন পর্বে ২০২১-এর শোকের মাস আগস্টে এটাই বলব- বঙ্গবন্ধু অমর ছিলেন, তিনি অমরই আছেন। ইতিহাস সঠিক জায়গায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে সোজা করে দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে আজ অবধি পর্বটা হচ্ছে শাপমোচন পর্ব। আমরা বাঙালি জাতি এখনো শাপমোচন পর্বে আছি। বাংলাদেশের ললাটে যে কলঙ্কগুলো লাগানো হয়েছে, আমরা সেসব কলঙ্ক মোচনের পর্বে আছি। একাত্তরের রাজাকারদের যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে একটি কলঙ্ক; ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড হচ্ছে আরেকটি কলঙ্ক; জেলখানায় চার আওয়ামী লীগ নেতার হত্যাকান্ড অনুরূপ কলঙ্ক; ১৯৭৬-এর ২১ জুলাই তাহের হত্যাকান্ডও একটি কলঙ্ক। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা-প্রচেষ্টা মেনে নিয়ে জাতি কখনো সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। জাতির কপাল থেকে এসব কলঙ্ক যতদিন আমরা মুছতে না পারব, ততদিন জাতি হিসেবে সোজা হয়ে হাঁটতে পারব না এবং হোঁচট খেতে থাকব।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক-মার্কিন পন্থার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াত-শিবির চক্র পরাজিত হয়। এ পাক-মার্কিন পন্থার অনুসারীরাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। ওই নৃশংস ঘটনায় শিশু রাসেল, গর্ভবতী নারী, মহীয়সী ফজিলাতুন নেছা মুজিবও রেহাই পাননি। আগস্ট হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক। এ জঘন্য হত্যাকান্ড কতিপয় মেজরের তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফল নয়। নির্মম এ হত্যাকান্ডে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল। মূল পরিকল্পনা ছিল খন্দকার মোশতাকের; আর জল্লাদের ভূমিকায় ছিল ফারুক-রশীদ-ডালিম-নূর চৌধুরী গং; সক্রিয়-সহায়কের ভূমিকায় ছিল জিয়াউর রহমান ও আরও কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা; সঙ্গে যোগ হয়েছিল অপরাপর সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের খামখেয়ালি আর অযোগ্যতা।

এ ছিল সংবিধানবহির্ভূত কর্মকান্ড। রাষ্ট্রপতি মারা গেলে সাংবিধানিকভাবে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি হবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী মোশতাক কী করে রাষ্ট্রপতি হয়? এ একটি অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘটনা। দ্রুত স্পষ্ট হয় খন্দকার মোশতাক ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরদের আসল চেহারা। এ ছাড়া দুঃখজনকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান, বিডিআর প্রধান, পুলিশ বাহিনী প্রধান ও রক্ষীবাহিনীর প্রধান বেতারে বিবৃতি দিয়ে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তারা হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা না জানতে পারেন; কিন্তু হত্যাকান্ডের পর পর আনুগত্য প্রকাশ করলেন! উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তাদের শায়েস্তা করার সামরিক শক্তি তিন বাহিনীর ছিল।

বঙ্গবন্ধুর সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সেনানায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বাকশালের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মোশতাককে সমর্থন দিয়ে সামরিক বাহিনী বিষয়ক উপদেষ্টা হন! ইতিহাসে তিনি খুনিদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সব নীতি নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে অধঃপতিত হয়ে মোশতাকের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন! বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রী মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এও এক সামষ্টিক নৈতিক পদস্খলনের ঘটনা। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ।

১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর, মার্কিন ও পাকিস্তানপন্থিরা ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ইতিহাসের ভাগাড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের কালো টুপির ৮৩ দিনের শাসনকালে ও জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনকালে ইতিহাসের ভাগাড়ে ঠাঁই পাওয়া সেসব জামায়াত-জঙ্গি-রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী ও নারী নির্যাতনকারী খুনিরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমদানি ও পুনর্বাসিত হয়। খুনিদের মহিমান্বিত করা শুরু হয়। সংবিধানের ৪ নীতিতে আঘাত হানা হয়। গণতন্ত্রের মোড়কে সামরিকতন্ত্র-ধর্মতন্ত্র তথা সাম্প্রদায়িক খিচুড়িতন্ত্র চালু করা হয়। রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আর খুনিদের সঙ্গে গণতন্ত্রীদের সহাবস্থানের বদঅভ্যাসের সূচনা হয়।

১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্য দিয়ে জঘন্যতম বর্বরতা, নির্মমতা ও পৈশাচিকতার প্রকাশ ঘটে। বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হত্যা হচ্ছে একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে- খুনিরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায়। তাই সেদিন কেবল সরকারপ্রধান বা একজন ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ঘটেনি; অথবা কেবল ক্ষমতার হাতবদলের ঘটনাও ঘটেনি। এর পর পর দেখি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মীমাংসিত বিষয়গুলো আবার অমীমাংসিত করার অপপ্রয়াস; বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথ থেকে ছুড়ে ফেলে উল্টোপথে তথা পাকিস্তানপন্থার পথে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জঘন্য অপরাজনীতির অপচেষ্টার সূচনা ও বিকাশ।

১৫ আগস্টের খুনিরা পাকিস্তানি আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে সংবিধান থেকে চার মূলনীতি মুছে ফেলে। ইতিহাসের ভাগাড় থেকে কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক ‘দ্বি-জাতিতত্ত্ব’ ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা সামনে আনে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসনে পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকেও। বেতার-টিভি-গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করে দেয়। সংবিধানে ‘দায়মুক্তি’র বিধান দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও সে সময়ের অপরাপর অপকর্মের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়; ষড়যন্ত্রের নীলনকশা যেন কেউ জানতে না পারে। ১৫ আগস্টের অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়। সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ এবং ১৯৭১-এর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-পুনর্বাসন ও উচ্চতর পদমর্যাদা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা আর রাজাকারদের মহিমান্বিত করা শুরু হয়। মোশতাক-জিয়া-খালেদা খুনিদের পক্ষে ও হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গায় এবং ওকালতি করে, খুনিদের মহিমান্বিত ও পুরষ্কৃত করে।

খুনিরা এখানে ক্ষান্ত হয় না; তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার দ্বিতীয়-অপচেষ্টা চালাতে থাকে। তার অংশ হিসেবে জাতির সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনার দিনটিকে বেগম খালেদা জিয়া নতুন করে তার জন্মদিনের তারিখ নির্ধারণ করে; কেক কাটার মতো আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পৈশাচিক উল্লাস প্রদর্শন করতে থাকে। বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এবং ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী বারবার প্রকাশ্যে নিষেধ করার পরও বেগম জিয়া ও বিএনপি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে যে বেগম জিয়ার আত্মা বাংলাদেশ-বাঙালির আত্মা না, তা পাকিস্তানি প্রেতাত্মা।

বঙ্গবন্ধু হত্যার অপরাজনীতি বহন করছে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিচক্র ও তাদের অনুসারী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা। তাই তারা বিরামহীনভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, সংবিধানের চার মূলনীতির বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। সুযোগ পেলেই উসকানি দিয়ে, গুজব রটিয়ে আর সংঘাত সৃষ্টি করে স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে। এখনো এরা দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দেওয়ার, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করার আর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের অপরাজনীতি করে চলছে। এরা বাংলাদেশের রাজনীতির বিষবৃক্ষ; দেশের শত্রু, বিপদ ও হুমকি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও সাজা হয়েছে। কিন্তু খুনিদের ধারক-বাহক-রক্ষক বিএনপিরও বিচার করা দরকার রাজনৈতিক আদালতে; রাজনীতির মাঠে তাদের বিচরণ নিষিদ্ধ করা দরকার। বিএনপি হচ্ছে সব খুনি-রাজাকার-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গি ও জামায়াতের ঠিকানা। বিএনপি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা উৎপাদন-পুনরুৎপাদনের কারখানা। সে জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ করে বিএনপিকে রাজনীতিতে রাখলে আবার নতুন নতুন জামায়াত হবে। কেবল বিষবৃক্ষের ডালপালা কাটলে হবে না; সমূলে বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে দিতে হবে।

রুখে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু হয় শেখ হাসিনা কর্তৃক আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর এবং ২০০৪ সালের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির ঐক্যের পর। বাংলাদেশ ১৯৭১-এর চেতনায় ফিরতিযাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশকে আবার বাংলাদেশের পথে ফেরত আনার সংগ্রাম জোরদার হয়। কিন্তু সামরিক শাসকদের রোপিত ‘বিষবৃক্ষ’ বিএনপি এবং খালেদা জিয়া রাজাকার-জামায়াত-জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক চক্রের পক্ষ নেয়। দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। জঙ্গি তান্ডব, আগুন-সন্ত্রাস ও আগুন-যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল ও মহাজোট অবশেষে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু নির্বাসন থেকে ফেরত আসেন স্বমহিমায়; ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার ও সাজা কার্যকর হয়। সংবিধান থেকে দায়মুক্তির বিধানসমেত ৫ম-৭ম সংশোধনী বাতিল হয়। চার মূলনীতি সংবিধানে পুনঃস্থাপিত হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও সাজা কার্যকর হতে থাকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ও ১৪ দল দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসীন থাকে। কিন্তু বিপদ কাটেনি। দেশের শত্রু বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিচক্র কোণঠাসা হলেও এখনো আত্মসমর্পণ করেনি এবং ভুল স্বীকার করেনি। জাতির জনক, চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণা মেনে নেয়নি। পাশাপাশি সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক বিজয়ের সুফল স্থায়ী করতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। আর যাতে অস্বাভাবিক সরকার ও রাজাকার সমর্থিত সরকার না আসে, আর যাতে বঙ্গবন্ধু নির্বাসনে না যান, সে গ্যারান্টি অর্জন ও স্থায়ী করা দরকার।

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের এ শাপমোচন পর্বে আমাদের সামরিক শাসনের জঞ্জাল এবং সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জালকে বাংলাদেশের সংবিধান, রাজনীতি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রসমেত সব ক্ষেত্র থেকে আমাদের দূর করতে হচ্ছে। এসব জঞ্জাল এখনো পরিষ্কার হয়নি। এখনো সামরিক শাসকদের অনেক পদচিহ্ন সংবিধানে, রাজনীতিতে, সমাজে ও সংস্কৃতিতে রয়ে গেছে। এসব পদচিহ্ন ও জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারে না এবং বঙ্গবন্ধুও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবেন না।

কোনো কোনো সময় জাতির জীবনে নিরপেক্ষতার কোনো জায়গা থাকে না; এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন- স্বাধীনতা ও পরাধীনতার সময় এবং সামরিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সময়। এখানে মাঝামাঝি কোনো অবস্থান থাকতে পারে না। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধে মাঝখান দিয়ে হাঁটার কোনো জায়গা থাকতে পারে না। যারা মাঝখান দিয়ে হাঁটেন, তারা কার্যত ন্যায়কে দুর্বল করেন আর অন্যায়কে শক্তি জোগান।

বাংলাদেশের শাপমোচন পর্বের যে লড়াইটা আজ চলছে, তার বিবেচ্য হচ্ছে- বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে নাকি সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ, সশস্ত্র জামায়াত আর হেফাজত ও তেঁতুল হুজুর থাকবে। তেঁতুল হুজুর, জামায়াত, হেফাজত ও যুদ্ধাপরাধীরা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, বর্তমানের শাপমোচন পর্বে তাদের কয়েকটা হাতিয়ার আছে। সে হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যাচার ও গুজব। সে হাতিয়ার হচ্ছে হত্যা ও চক্রান্ত। একাত্তরে তারা জনতার সঙ্গে পারেনি। মিথ্যাচার-গুজব-চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে, নারী নির্যাতন করছে এবং নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে। তারা অপরাজনীতি দিয়ে আমাদের মোকাবিলা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে রাতের আঁধারে হত্যা করেছে, তাঁর পরিবার-সদস্যদের হত্যা করেছে, তবু তারা ১৫ আগস্টের পর অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারেনি, প্রগতির শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারেনি; যদিও বারবারই তারা হত্যাকান্ড বা হত্যাপ্রয়াসের আশ্রয় নিয়েছে; ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে, অনেক বিপর্যয় কাটিয়ে, দেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এ উন্নতি নিশ্চিত ও স্থায়ী করতে বাংলাদেশকে আরেকধাপ এগোতে হবে, জেগে উঠতে হবে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে। কিন্তু তার জন্য সব ধরনের দলবাজি-দুর্নীতি-ক্ষমতাবাজি থেকে মুক্ত সুশাসন দরকার সব ক্ষেত্রে; সব ধরনের বৈষম্যের অবসান দরকার সমৃদ্ধির সুফল সব ঘরে পৌঁছাতে; আর দরকার রাষ্ট্র-রাজনীতি-সংবিধান থেকে সব ধরনের রাজনৈতিক গোঁজামিল দূর করা।

খুনিরা বুঝতে পারেনি যে আমরা যোদ্ধা জাতি; বোঝেনি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর শক্তি কত। সে জন্য তারা আঘাত করেছিল ১৫ আগস্ট এমন একজনের ওপর, যিনি সাধারণ ব্যক্তি বা সাধারণ রাজনীতিক ছিলেন না। চমৎকারভাবে কবি শামসুর রাহমানের উপলব্ধিতে তার প্রকাশ ঘটেছে-

‘ধন্য সেই পুরুষ যার নামের

উপর পতাকার মত দুলতে থাকে

স্বাধীনতা।

ধন্য সেই পুরুষ যার নামের

উপর ঝরে মুক্তিযুদ্ধের জয়ধ্বনি।’

বঙ্গবন্ধুর এ প্রত্যাবর্তন পর্বের এ শোকের মাসে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়- ১৫ আগস্ট শারীরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও, বাঙালি ও বাংলাদেশের আত্মাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালালেও, খুনিরা তা পারেনি। ক্ষত-বিক্ষত আত্মা নিয়ে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার সর্বাধিনায়কত্বে ১৪ দলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনা বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। পাকিস্তানপন্থা আর রাজাকারী অপরাজনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে বাংলাদেশ বাংলাদেশের পথেই এগিয়ে যেতে থাকবে।

লেখক : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ-এর সভাপতি; সংসদ সদস্য; তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

সর্বশেষ খবর