সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু সেদিন যে কথা বলেছিলেন

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছিল- ছাত্রলীগের সম্মেলন এবং জনসভায় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরা...

বঙ্গবন্ধু সেদিন যে কথা বলেছিলেন

আমির হোসেন আমু

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ন্যাপের অফিসে এক বৈঠকে আমাদের কাছে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বললেন, শেখ মুজিব পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন না। প্রথম যখন গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়, সে সভায় প্রথম বলেছিলেন, যারা পাকিস্তানে বিশ্বাসী হবে না, তাদের নিয়েই কমিটি গঠন করা হবে এবং সেভাবে আন্দোলন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমরা যখন কারাগারে তখন জেলে বসেই বিভিন্ন দিবস পালন করতাম। আলোচনা সভা করতাম। সেই আলোচনা সভায় একদিন কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, শেখ মুজিব কোনো দিনও পাকিস্তানে বিশ্বাস করত না। আমাকে বলত, দাদা, আপনারা কোনো দিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। আমাকে সাহায্য করেন। আমি দেশ স্বাধীন করে আপনাদের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। অনেকে মনে করেন বঙ্গবন্ধু ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধীনতার চিন্তা করেছেন। না। ১৯৬১ সালে আমাকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবার যে আন্দোলনের সূচনা করব, এটাই হবে আমাদের মূল আন্দোলন। এ জন্য তৈরি থেকো। ১৯৬১ সালের শেষের দিকে শেখ মণি আমাদের চিঠি লিখে ঢাকায় নিলেন। আমাদের ডেকে নিয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বরিশালে ছাত্র ইউনিয়নের বিরোধ মিটিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে প্রেস কনফারেন্স করবেন। এ প্রেস কনফারেন্সের সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা হবে। তিনি জানালেন, সোহরাওয়ার্দী সাহেব গ্রেফতার হবেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মুক্তি ও গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করতে হবে।

আমরা যখন ছাত্রলীগের বিভিন্ন সম্মেলন করতাম তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছিল- ছাত্রলীগের সম্মেলন এবং জনসভায় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরা। লাহোর প্রস্তাবে এই দেশ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ছিল ১৯৪০ সালে। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দেওয়ার আগে যখন পাক-ভারত যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হলো। মোজাহারুল হক বাকি সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাব। আমরা যখন ওখানে মিলিত হতে গেলাম, তখন এনএসএফ এবং রনো গ্রুপ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিল। পারে তো মারে। আমাদের বলল ভারতের দালাল। যুদ্ধের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই, ইত্তেফাকের কোনো ভূমিকা নেই ইত্যাদি। আমরা বঙ্গবন্ধুর অফিসে গেলাম। তাঁকে বললাম। বঙ্গবন্ধু অট্টহাসি দিয়ে বললেন, যুদ্ধের পর এমন জিনিস দেব, তোমরা ফুলের মালা পাবা। ওরা থাকবে না। তখন আমরা বললাম, এই কয় দিন তো আমাদের থাকতে হবে। মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হবে। ছাত্রলীগ করতে হবে। একটা কিছু বলেন। তখন বঙ্গবন্ধু অনেক বাগবিতন্ডা করার পর বললেন, আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি একজন পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ বানিয়েছি। তাকে দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট দেব। এই কথা বলে বঙ্গবন্ধু শাহ আজিজ সাহেবকে টেলিফোন করলেন। তিনি তখন অল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় উপনেতা। তাকে বঙ্গবন্ধু বললেন, তুমি একটা স্টেটমেন্ট দাও। তিনি স্টেটমেন্ট দিলেন। তারপর বললাম ইত্তেফাকের ভূমিকা প্রসঙ্গে। বঙ্গবন্ধু বললেন, মানিক ভাই জানে, তাঁর কাছে যাও। আমরা তাঁর কাছে গেলাম। মানিক ভাই বললেন, আমি কিছু জানি না; মুজিবুর মিয়া আমার পত্রিকা চালান। তিনি যেভাবে বলেছেন, আমি সেভাবে চালাচ্ছি। তিনি না বলা পর্যন্ত আমি একটা লাইনও লিখতে পারব না। অনেক আলোচনার পর মানিক ভাইকে বাধ্য করলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে। তিনি টেলিফোন করলেন। মানিক ভাই বললেন, যাও। আমরা চলে এলাম। পরদিন দেখলাম বাঁ পাশে ছোট্ট একটা নিউজ করলেন।  এই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি।

লেখক : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর