সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

রিন্টুকে মনে পড়ে

আমি তাকিয়ে দেখি রিন্টুর ঘাড়টা একপাশে হেলে গেছে। এভাবেই নিভে যায় আমার ভাইয়ের জীবন প্রদীপ...

রিন্টুকে মনে পড়ে

সুলতানা নাদিরা

১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু, আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির পরিবার। রিন্টুও সেই দিন আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সঙ্গে নিহত হয়। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আমার ভাইয়ের বুক। রিন্টুর দুজন বন্ধু জিল্লু ও রফিক মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে জিল্লুর কাছ থেকে জানতে পারি, ‘‘আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সবাইকে ড্রয়িং রুমে একসঙ্গে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যু নিশ্চিত না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি করতে থাকে। একপর্যায়ে ঘাতকরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে আমাদের ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায় রিন্টু ও আমি পাশাপাশি বেডে ছিলাম। আমি একজনকে রিন্টুকে দেখিয়ে বলি ওর কী অবস্থা? তখন রিন্টু আমাকে বলে দোস্ত আমাকে একটু পানি খাওয়াবি? পানির জন্য আমার জীবন শেষ! দোস্ত আমি আর বাঁচব না। আমি বললাম রিন্টু আমারও তো একই অবস্থা। আমার সারা গায়ে অসংখ্য গুলি। আমি তো হাঁটতে-চলতে পারতেছি না, আমি তোরে পানি খাওয়াব কীভাবে? দাঁড়া দেখি কাউরে বলতে পারি কি না। এটাই ছিল রিন্টুর সঙ্গে আমার শেষ কথা, এরপর আমি তাকিয়ে দেখি রিন্টুর ঘাড়টা একপাশে হেলে গেছে”। এভাবেই নিভে যায় আমার ভাইয়ের জীবন প্রদীপ। এ হত্যাকান্ডের কথা তখন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানতে পারিনি। ১৫ আগস্ট সকাল ছয়টায় আমার ছোট খালু তৎকালীন সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন, আমার ভাই ঝালকাঠি-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ আমির হোসেন আমুকে এই নারকীয় হত্যাকান্ডের কথা জানান। আমু দাদা আমার বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত তৎকালীন ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খানকে রিন্টুর অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন। অতঃপর সবুর দাদা রিন্টুর মৃত্যু সংবাদ সবাইকে জানান। আমাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া, সবুর দাদা রিন্টুর লাশ পাওয়ার চেষ্টা করলে জানতে পারেন যে, তাকে ইতোমধ্যেই বনানী কবরস্থানে অন্য শহীদদের সঙ্গে দাফন করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আমাদের পুরো পরিবার স্তম্ভিত হয়ে যায়। ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মা সবসময় ওর শোকে কেঁদেছেন।

লেখক : সংসদ সদস্য, ১৫ আগস্টে নিহত আবদুর নঈম খান রিন্টুর বড় বোন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর