১১ নভেম্বর, ২০১৯ ১৭:৪৮

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে মমতা, পুনর্বাসনের নির্দেশ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে মমতা, পুনর্বাসনের নির্দেশ

গোটা পশ্চিমবঙ্গে ৭ জনের প্রাণ কেড়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ক্ষতিগ্রস্ত বিঘার পর বিঘা চাষযোগ্য জমি। ঘর ছাড়া কয়েক হাজার মানুষ। ঘরের মায়া ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে রাত কাটাতে হচ্ছে দুর্গতদের। নেই পর্যাপ্ত খাওয়ার পানি, বিঘ্নিত বিদ্যুৎ পরিষেবাও। এমন অবস্থায় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নামখানা ও বকখালি সংলগ্ন এলাকায় আকাশ পথে পরিদর্শন করলেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

সোমবার সকালে হেলিকপ্টার থেকে বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখার পর ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য কাকদ্বীপে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার সাথে ছিলেন রাজ্যটির মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাসহ রাজ্য প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রশাসনিক বৈঠকেই বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার প্রশংসা করার পাশাপাশি দুর্গতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন মমতা।

মমতা বলেন, আগে থেকেই প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। না হলে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। দুর্গতদের জন্য এখনও পর্যন্ত ৪৭১ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। খোলা হয়েছে ৩২৩ টি রান্নাঘর। ৯৪ টি বোট-কে কাজে লাগানো হয়েছে। 

এ সময় তিনি বলেন রাজ্য সরকার যেভাবে বুলবুলের মোকাবিলা করেছে তাতে কেন্দ্রীয় সরকারও প্রশংসা করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলি পর্যবেক্ষণে আগামী দুই একদিনের মধ্যেই দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল আসছে। এ ব্যাপারে মুখ্যসচিবকে সমন্বয় করতে বলেন তিনি। 
যদিও বুলবুলের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫-৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ বাড়ি। সুন্দরবন বনাঞ্চল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১০০ শতাংশ ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে। গোটা রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এরমধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় ৫ জন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ১ জন এবং পূর্বমেদিনীপুর জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পান চাষেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বিদ্যুতের কর্মকর্তারা মুখ্যমন্ত্রীকে তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২১ টি বিদ্যুতের সাব স্টেশন, ৬ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। আর তার মেরামত করতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে বলে জানান বিদ্যুৎ দফতরের কর্মকর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীও একশ দিনের প্রকল্পের আওতায় এই সমস্ত কাজে এলাকার যুবক-যুবতীদের নিয়োগ দিতে বলেন। এছাড়াও দুর্গতদের মধ্যে পর্যাপ্ত খাওয়ার পানি, ওষুধ, শুকনো খাবার, বেবি ফুড সরবরাহের নির্দেশ দেন তিনি। সেই সাথে ঝড়ে নিহতদের পরিবারগুলিকে ২ লাখ রুপি করে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

তবে এদিনের প্রশাসনিক জেলায় গোটা এলাকায় ‘ম্যানগ্রোভ’ অরণ্য বাঁচানোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেচ দফতরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, আপনারা জরিপ করে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সারানোর ব্যবস্থা করুন। ম্যানগ্রোভের দিকেও জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে বন দফতরকে সাথে আলোচনা করে ও সমন্বয় রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ লাগানোর ব্যবস্থা করুন। নতুন করে গাছ লাগান। 
সব মিলিয়ে বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা শাসকের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। 
আগামী বুধবার বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট পরিদর্শনে যাবেন মমতা ব্যনার্জি। 

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর