শিরোনাম
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০২:৪১

কান দিয়ে নয়, চোখ দিয়ে দেখুন : মমতাকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কান দিয়ে নয়, চোখ দিয়ে দেখুন : মমতাকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

মমতা ব্যানার্জি। ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আর্শিবাদ না থাকলেও চলবে, আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনেই চলবে বিশ্বভারতী। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এক প্রেস বিবৃতি দিয়ে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হলো সে কথা। 

বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে ওই প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন, দায়িত্বজ্ঞানহীন। আপনার শিষ্য (তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল) কারাগারে বন্দি। আপনার আর্শিবাদের প্রয়োজন নেই।’

বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ বিভাগের তরফে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর কি করা উচিত সেই উপদেশও দেওয়া হয়। এমনকি, রাজনৈতিক কথাও তুলে ধরা হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সম্পর্কে এহেন মন্তব্য করে কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এভাবে প্রেস বিবৃতি দেওয়া কতটা যুক্তি ও আইনসম্মত।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ১৩ শতক জমি দখল করে রাখার অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়েছেন ওই জমি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিতে। এমনকি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নোবেল অমর্ত্য সেনের নোবেল পদক পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট পানি ঘোলা হয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই অভিযোগে নিন্দার ঝড় সর্বত্র।

এরপরই গত সোমবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’ নামক বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। অমর্ত্য সেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাকে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের নথি তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন ১.৩৮ একর জমির মালিকই অমর্ত্য সেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেনকে যেভাবে অসম্মান করা হচ্ছে, তাতে বাংলার মানুষ খুশি নয়। তার পরিবার যাতে কোনোরকম অসুবিধা না পড়ায় না পড়ে সেটা দেখাও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব বলে জানি জানান মমতা। নাম না করে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এর বিরুদ্ধে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। কটাক্ষ করে মমতা বলেছিলেন ‘তিনি কি বিশ্বভারতীর উপযুক্ত লোক?’

এরপর মঙ্গলবার বোলপুরের রাঙাবিতানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সাসপেন্ড করার বিষয়টি নিয়ে মুখ হলেন মমতা।

এমনকি বুধবারও বীরভূম জেলা সফরে এসে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে প্রশাসনিক সভা থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে এক হাতে নেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বভারতী আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। কিন্তু আজ শিক্ষক শিক্ষার্থী সকলের কাঁদছেন। আসলে ওরা বিশ্বভারতীকে গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানানো হবে।’

এরপর এদিন সন্ধ্যায় বিস্ফোরক প্রেস বিবৃতি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা মহুয়া ব্যানার্জীর সাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। কারণ, তাকে তার স্তাবকেরা যা শোনান তিনি তাই বিশ্বাস করেন।’

বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীদের সাসপেন্ড করার বিষয়ে ওই বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অতএব মুখ্যমন্ত্রী একটু বাড়াবাড়ি করলেন কি না? মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে না দেখে মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করে বিধান দিন।’ 

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিসহ গরু পাচার মামলায় বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাজ্যের যে নেতা-মন্ত্রীরা আছেন তাদের নিশানা করে বিশ্বভারতীর প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভেতরে। কি করে হলো? কারণ, আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত। আপনার প্রিয় শিষ্য যাকে ছাড়া আপনি বীরভূম ভাবতে পারেন না। তিনিও কারাগারে। কবে বেরোবে কেউ জানে না। আগে সাবধান করলে দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন। আপনি যদি সত্যি অর্থে মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হন, তাহলে কথাটা আপনার বোধগম্য হবে।’

এভাবেই প্রেস বিবৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত তুলোধোনা করল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এরই পাশাপাশি ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা। কারণ, আমরা প্রধানমন্ত্রী মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত। চোখ দিয়ে দেখুন, কান দিয়ে নয়। আপনি ছাত্র রাজনীতি করে রাজ্য রাজনীতির মাথা খেয়েছেন।’

সব মিলিয়ে জোর করে জমি আটকে রাখা, নোবেল পদক ইস্যুতে অমর্ত্য সেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার সর্বোপরি মমতা ব্যানার্জির মধ্যে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই বিবৃতি সেই বিতর্কে এই ঢাললো একথা বলা যেতেই পারে। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর