শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

গাজীপুরে দুই দলের চ্যালেঞ্জ

গাজীপুরে দুই দলের চ্যালেঞ্জ

আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সম্প্রতি চার সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবি হওয়ায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে দলটি। কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে চার সিটিতে বিজয়ের পর গাজীপুরের বিজয়ও ধরে রাখতে চায় বিএনপি। গাজীপুর নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করে মাঠে নেমেছে ১৮ দলীয় নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে গাজীপুরে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আসলে কে হবেন গাজীপুরের মেয়র তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ নির্বাচনে বড় দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি বসে নেই মেয়র প্রার্থীরা। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দুই দলের মেয়র প্রার্থী। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেছেন তারা। গতকাল ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা ভোট প্রার্থনা করেন।

এদিকে চার সিটিতে পরাজয়ের পর নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ডে নির্দেশে গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় নেতারা গাজীপুরে অবস্থান করছেন। অনেকে প্রতিদিন গাজীপুর গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রনেতা শাহজাদা মহিউদ্দীন ও সাবেক সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপ্টনের নেতৃত্বে একটি টিম প্রচারণা চালায়। ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ও খন্দকার তারেক রায়হানের নেতৃত্বেও প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী প্রচারণায় অংশ নেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে গাজীপুর সিটি নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপির সাংগঠনিক সফর বাতিল করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় সব নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় নেতাদের যেতে বলেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে গতকাল একটি দল টঙ্গীর আউচপাড়া, বাদাম, দেওড়া, মুদাফা এলাকায় অধ্যাপক এম এ মান্নানের পক্ষে গণসংযোগ করেন। ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে মহিলা দলের একটি টিম টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় টেলিভিশন প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ গাজীপুরে অবস্থান করছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান গতকাল টঙ্গী মাজার এলাকা, চেরাগআলী মার্কেট, তিলের ঘাটি, গুটিয়া, শরীফ মার্কেট, খরতৈল, আউচপাড়া, টঙ্গী ও কলেজ গেটে গণসংযোগ করেন এবং মিলগেটে পথসভায় বক্তব্য দেন। সকালে টঙ্গীতে একটি মাজার জিয়ারত করেন। তিনি হাজী পিয়ার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় ও মুসলি্লদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জেলা শ্রমিক দলের নেতা, টঙ্গী থানা বিএনপির নেতাসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, এটা দুঃখজনক। তিনিও মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। আমরা শুনেছি সরকার তাকে জোর করে নির্বাচনের মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এতে বোঝা যায় সরকারের একটি ষড়যন্ত্র কাজ করছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনেরও দাবি জানান। এদিকে নগরীর হায়দরাবাদ থেকে গতকাল নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খান। টঙ্গীর মুন্নু টেঙ্টাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় প্রতিবন্ধীদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি কোনিয়া মধ্যপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং মুসলি্লদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গাছা, বঙ্গবন্ধু রোড এলাকায়ও গণসংযোগ করেন। এ সময় দোয়াত-কলম প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থন সম্পর্কে আজমত উল্লাহ খান সাংবাদিকদের বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। মিডিয়াতে আপনারা দেখেছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার সই, সম্মতি ছাড়া এমনটি হয়নি। আমাদের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এত দিন নির্বাচনী মাঠে পরিশ্রম করেছেন, ক্লান্তি দূর হলেই তিনি মাঠে নামবেন। এদিকে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মাঠে না থাকলেও তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের খবরে তার সমর্থকদের মাঝে কিছুটা হতাশা বিরাজ করে। জাহাঙ্গীরের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি আনারস প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন সরকার বলেন, নির্দলীয় নির্বাচনে দলের দিকে না তাকিয়ে যোগ্য ব্যক্তি, সমাজ পরিবর্তন ও নগরীর উন্নয়নে যারা কাজ করবে তাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করা উচিত। গতকাল গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন তিনি। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর