রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা
রানা প্লাজা ধসের ১০০ দিন

সরকার মালিকের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের ১০০ দিন পার হলেও সরকার-পোশাকশিল্প মালিক ও বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাসমূহের অনেক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়নি শ্রমিকরা। ভবিষ্যতেও এ অনিশ্চিয়তা থেকে যাচ্ছে। ভবন ধসে আহত অনেক শ্রমিক এখনো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা পাননি। এ অবস্থায় অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন, সরকার ও মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত 'রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১০০ দিন : প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন পরিস্থিতি' শীর্ষক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রানা প্লাজার ঘটনায় বিজিএমইএ'র ভূমিকা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিজিএমইএ'র হিসাবে ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় দুই হাজার ৭৬০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। কিন্তু অন্যদের হিসাবে এ সংখ্যা তিন হাজার ৯০০ জন। সিপিডি চেয়ারম্যান প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ। মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির এই আয়োজনে বেসরকারি ১৪টি সংস্থা সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে।

অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, রানা প্লাজার ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমরা সবার দায়বদ্ধতা দেখতে চাই। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীলতাও দেখতে চাই।

জি এম কাদের 'প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের স্বচ্ছতা থাকা উচিত মন্তব্য করে বলেন, রাজনীতির পরিবর্তন শুধু রাজনীতিবিদরা একা করতে পারবে না। এটা জনগণকে করতে হবে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের বুদ্ধি নিয়েই সরকার চলে। রানা প্লাজার পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সরকার সুশীল সমাজের পরামর্শ গ্রহণ করবে। নতুন বেতন কাঠামো তৈরির সময় শ্রমিকদের মজুরি সমঝোতা করা হবে। শ্রম আইনের আলোকে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা হবে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রানা প্লাজার ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, দেশে সুশাসনের বড় সমস্যা। এমনকি যথেষ্ট আইন-কানুন নেই যা প্রয়োগ করা দরকার।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রানা প্লাজা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিশন হওয়া উচিত। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ বলেন, সব প্রতিষ্ঠানে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের পুষ্টি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, রানা প্লাজার ঘটনা দুর্ঘটনা নয়- এটি হত্যাকাণ্ড। কেননা ওই ভবন ছিল মৃত্যুকূপ। তিনি প্রস্তাবিত পোশাক পল্লী সম্পর্কে বলেন, সেখানে যেন দুইতলার বেশি ভবন না করা হয়। এ ছাড়াও মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য অপু উকিল, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, নিজেরা করি'র খুশি কবির, এমসিসিসি'র সাবেক সভাপতি আনিস-উদ দৌলা, ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য উপদেষ্টা জিল্লুল হাই রাজি প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর