বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
ফের উত্তাল গার্মেন্ট শিল্প

আশুলিয়া টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গাজীপুরে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার পর ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে গার্মেন্ট শিল্প। গতকালও ন্যূনতম বেতন আট হাজার টাকার দাবিতে আশুলিয়া, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভ, অবরোধ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।

আমাদের আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকালও শ্রমিক বিক্ষোভে অশান্ত হয়ে উঠে আশুলিয়া। শ্রমিক-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মুখে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে অর্ধশতাধিক কারখানায়। সকাল ৯টায় জিরাবো শিল্পাঞ্চলের মাসকট, সাউদার্ন, রেডিয়েন্ট, টি ডিজাইনসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর ও বিশমাইল-জিরাবো মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে হা-মীম গ্রুপের নারীশ্রমিক নুরজাহান (২৩) গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক-পুলিশ আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিল্পাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। একই সময় নিশ্চিন্তপুরে হা-মীম গ্রুপের কারখানার ১০ হাজারেরও অধিক শ্রমিক পাশর্্ববর্তী কারখানাগুলোতে হামলা চালায়। হামলার মুখে বান্দু ডিজাইন, উইন্ডি এ্যাপারেলস, শেড ফ্যাশনসহ বিভিন্ন কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, সকালে পাগার ও বিসিক এলাকায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে ৪ নারীশ্রমিক গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টায় পাগার অনন্ত ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে শিশির ও হামিদ গার্মেন্টসহ প্রায় দশটি কারখানার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় জাবের অ্যান্ড য়োবায়ের ফেব্রিঙ্ কারখানা কর্তৃপক্ষ ৪ জন শ্রমিককে আটক করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানাগুলোতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। শিল্প পুলিশ ও টঙ্গী থানা পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে চার শ্রমিক গুলিবিদ্ধ ও শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর সেলিম রহমান ও থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মোজাম্মেল হকসহ ২০ জন আহত হয়।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, দুই শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ও নিরাপত্তাজনিত কারণে অধিকাংশ কারখানা গতকাল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। নাশকতার আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুলিশ জানায়, দুই শ্রমিক মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুর শিল্প এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর শিল্প এলাকায় দেখা যায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ দেখলেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। পুলিশও টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। জয়দেবপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকালে কোনাবাড়ী এলাকার কয়েকটি সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিকে বিকালে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. আবদুল বাতেন জিএমএস পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম জানান, নিহত শ্রমিক রুমার পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ২০ হাজার টাকা এবং কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর