বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

\\\'ড্রেসিংয়ের লাইগা ফ্রি গজও আমাগো কিনতে হইতাছে\\\'

আশঙ্কামুক্ত কেউই নয় ডা. সামন্ত লাল সেন

\\\'ড্রেসিংয়ের লাইগা ফ্রি গজও আমাগো কিনতে হইতাছে\\\'

নারায়ণগঞ্জের নির্মাণ শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ (৪০)। তিন কন্যা ও স্ত্রী শিল্পী বেগমকে নিয়ে তার পরিবার। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুজনের একজন এবার সমাপনী পরীক্ষার্থী। আরেকজন ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ১২ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায় হাশেম রোডে 'কোমল' মিনিবাসের আরোহী আবুল কালাম হরতালকারীদের লাগানো আগুনে মারাত্দক দগ্ধ হন। আগুনে তার শরীরের ২৫ ভাগ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাবার দুশ্চিন্তায় এ নির্মাণ শ্রমিকের তিন মেয়েরই ঘুম হারাম। স্ত্রী সর্বক্ষণই হাসপাতালে তার পাশে রয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটের ৪র্থ তলায় ১০ নম্বর বেডে গতকাল তাকে কাতরাতে দেখা যায়। এ সময় বার্ন ইউনিটে উপস্থিত আবুল কালামের বড় মেয়ের জামাই মেজবাহ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, 'ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হইছে। আরও টাকা লাগবো। এতদিন জমানো টাকা দিয়া চিকিৎসা হইছে। এখন ধার করতে হইতাছে। দামি ওষুধের পাশাপাশি সামান্য ড্রেসিং করার জন্য যে গজ হাসপাতাল থেইক্যা ফ্রিতে দেওয়ার কথা তাও বাইরে থেইক্যা টাকা দিয়া কিইন্যা আনতাছি।' আবুল কালামের স্বজনদের মতো একই অভিযোগ আগুনে পোড়া অন্য রোগীদের স্বজনদের। তারা জানান, টাকা ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়রা ড্রেসিং করাতে চাইছে না। হরতালে গাড়িতে দেওয়া আগুনে দগ্ধ আরেক বাসযাত্রী, ফুল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। আগুনে এ ব্যবসায়ীর শরীরের ৩০ শতাংশের মতো পুড়েছে। জানতে চাইলে তার বোন রহিমা এ প্রতিবেদককে জানান, চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই আবদুর রহিমের পরিবার প্রায় ২০ হাজারের মতো টাকা ধার করেছেন। তিনি বলেন, 'শুনেছি হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয় ও অন্যরা রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য টাকা দিছে। কিন্তু সে টাকা আমরা পাই নাই। কোনো ওষুধও হাসপাতাল থেইক্যা ফ্রি পাইতাছি না। নিজেগো কিনতে হইতাছে। জানি না ভাইয়ের চিকিৎসা কেমনে করামু।' এদিকে হরতালের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ শিশু সুমির অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভালো। গতকাল বার্ন ইউনিটের ২য় তলায় শিশুটিকে বিছানায় ব্যান্ডেজ মোড়ানো অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ব্যথায় শিশুটি কাঁতরে উঠছিল। সুমির পাশেই তার দাদি রহিমা বেগমকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে হরতালে সহিংসতার শিকার মোট অগি্নদগ্ধ রোগীর সংখ্যা ১৬ জন। এদের মধ্যে একজন আল-আমিন বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন।

তার দেহের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলছেন। এদিকে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল জানান যে, হরতালের সহিংসতায় বর্তমানে যারা ভর্তি আছেন তারা কেউই আশঙ্কার বাইরে নয়। তাদের আশঙ্কামুক্ত হতে কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। রোগীদের ড্রেসিংয়ের জন্য গজ কেনা ও ওয়ার্ডবয়দের টাকা ছাড়া সেবা না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জানা ছিল না। যদি এমন হয়ে থাকে তবে এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ২ দফা হরতালে গত কয়েকদিনে বার্ন ইউনিটে প্রায় অর্ধ শতাধিক অগি্নদগ্ধ মানুষ চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। হরতালে এত বিপুল সংখ্যক রোগীদের অগি্নদগ্ধ হতে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে এর আগে দেখা যায়নি।

 

 

সর্বশেষ খবর