মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

অবরোধে খুঁড়িয়ে হাঁটছে অর্থনীতি

কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত, স্থবির বাণিজ্য

অবরোধে খুঁড়িয়ে হাঁটছে অর্থনীতি

চলমান রাজনৈতিক সংকট আর টানা হরতাল ও অবরোধের ফাঁদে পড়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে দেশের অর্থনীতি। স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। দীর্ঘ বন্ধের ফাঁদে পড়েছে কলকারখানার উৎপাদন। ফুটপাত, মুদি দোকানদার থেকে শুরু করে নামিদামি শপিং মলের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। মাসের পর মাস দোকান বন্ধ রাখায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক সমঝোতার আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে অব্যাহত অবরোধের কারণে ঢাকার বাইরে থেকে সঠিক সময়ে কোনো মালবাহী ট্রাক রাজধানীতে ঢুকতে পারছে না। ফলে কাঁচা শাকসবজিবাহী অসংখ্য ট্রাক পথে পথে আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাকসবজি। এ জন্য ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সঠিক সময়ে সবজি মাড়াই ও বিক্রি করতে না পারায় কৃষকরাও পড়েছেন বিপাকে। দেশের ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের সহিংস রাজনীতির অবসান চাই। হরতাল আর অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এ জন্য অর্থনীতির স্বার্থে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা। 
শিল্পোদ্যোক্তারা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় দফায় দফায় বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ আবারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ, অপরদিকে নতুন কোনো শিল্প গড়ে উঠছে না। নতুন করে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছে না কোনো উদ্যোক্তা। যার প্রভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। শুধু তাই নয়, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সামনের বছরগুলোয় বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। পাশাপাশি নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হলে জিডিপি কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। ফলে ঝুঁকির মধ্য দিয়েই চলমান সময় পার করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি- মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তখন আর টেনে তুলতে পারবেন না কেউই। তখন যে দলই ক্ষমতায় আসবে কঠিন বিপদে পড়বে। এ জন্য বলি, একটা সমঝোতায় আসেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অর্থনীতিকে বাঁচান। তিনি আরও বলেন, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে ফয়সালা করতে হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সবুর খান বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্তরায়। সব ধরনের সহিংস রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। আর এক্ষেত্রে সরকারি দলকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের হরতাল ও অবরোধ থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। 
এ খাতের সম্ভাবনাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলা হচ্ছে। যার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর