মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বন্দরে আটকে গেছে আমদানি করা পণ্য

অবরোধে আটকে গেছে আমদানিকৃত নিত্যপণ্য। যার বেশির ভাগই আবার পচনশীল। দ্রুত খালাস করতে না পারলে এগুলো পচে যাবে। আবার যেগুলো খালাস হয়েছে সেগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রেরণের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না ট্রাকলরি। সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সহায়তা। এ পরিস্থিতিতে নিরুপায় ব্যবসায়ীরা বিকল্প সহায়তার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন। এদিকে সীমান্ত দিয়ে আমদানি পণ্য ঢুকতে না পারায় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহজনিত সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়ে গেছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আদা, রসুন ও পিয়াজের দাম। মিয়ানমারের আকিয়াবে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন পিয়াজ আটকে রয়েছে এক সপ্তাহ ধরে। অবরোধের কারণে ওই পিয়াজ দেশে আনতে পারছেন না আমদানিকারক আজিজ। শেষে নৌপথে ট্রলারে পণ্য আনার চেষ্টা করেও বাধাগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় কাস্টম অফিস ও কোস্ট গার্ডের। উপায়ান্তর না দেখে ওই ব্যবসায়ী বাণিজ্য সচিবের দ্বারস্থ হন। সচিব পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআরের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নৌপথে পণ্যটি আনার। চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে ব্যবসায়ী আজিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পরিস্থিতি এমন যে, আমদানিকৃত মাল সাগরে ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তিনি ছাড়াও আকিয়াবে বাংলাদেশি আরও প্রায় গোটা দশেক আমদানিকারকের পণ্য আটকে আছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী জানান, পচনশীল পণ্য বলে এগুলো দ্রুত খালাস করতে না পারলে সব পণ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু টেকনাফ নয়, ভারতীয় সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোতেও একই অবস্থা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এবং সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে পিয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, ফলমূলসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল নিত্যপণ্য আমদানি হয়ে থাকে। রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি মোকাম মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী হাফিজ জানান, ওই দুটি বন্দরে তাদের লাখ লাখ টাকার পণ্য আটকে গেছে যেগুলো সীমান্ত পার করে দেশে আনতে পারছেন না। এক্ষেত্রে তারা স্থানীয় কাস্টমস অফিসের বাধার মুখে পড়ছেন। পণ্যজটের দোহাই দিয়ে ওই পণ্য বন্দরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে কাস্টম অফিস। আবার বন্দরে আটকা পণ্যও ট্রাকলরির অভাবে সরানো যাচ্ছে না। হাফিজ জানান, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দরের পরিস্থিতি এত খারাপ যে বন্দরের আশপাশে কোনো ট্রাকলরি ঘেঁষতে পারছে না। জামায়াত-প্রধান এলাকা হওয়ার কারণেই পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে বলে জানান তিনি। এ অবস্থায় সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ সহায়তা না পেলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেবে বলে তার আশঙ্কা।

সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের : ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধের কারণে পণ্য সরবরাহে সংকট দেখা দেওয়ায় বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল লিটারে দুই টাকা বৃদ্ধির অগ্রিম বার্তা দিয়ে গেছে সরবরাহকারীরা। এখনো মানভেদে ১১৬ থেকে ১২০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। চায়না আদার দাম উঠেছে ১৮০ টাকা কেজি। বাজারে গত সাত দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে গড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে পিয়াজের দাম কমার পর অবরোধের কারণে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। বর্তমানে আমদানিকৃত পিয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহজনিত সংকটে বেড়েছে শাকসবজির দামও। শীতকালীন সবজি বাজারে দেখা গেলেও কেজি প্রতি প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আমদানিকারক আজিজ বলেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর