মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বিমানে ঠাঁই নেই, অবরুদ্ধ মহাসড়ক, বিপর্যস্ত ট্রেন

টালমাটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা

অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানে যাত্রীদের ঠাঁই মিলছে না। প্রতিটি রুটে 'ফুল ফ্লাইট' যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে বিমানগুলো। বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনে অবরুদ্ধ মহাসড়ক এবং বিপর্যস্ত ট্রেন যোগাযোগের কারণে অনেক যাত্রী বেসরকারি বিমানকেই নির্ভরতার বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাড়তি যাত্রী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ার। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানেরও যাত্রী বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসে বিরোধী দলের সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ায় যাত্রীরা ঝুঁকছেন অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানগুলোর ওপর। এদিকে বাংলাদেশ বিমানসহ কয়েকটি বিমানের টিকিট মূল্য অর্ধেক কমে যাওয়ার অফারের কারণেও অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান যাত্রী বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটি কাটাতে আসা প্রবাসীরা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চলে যাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধে সড়ক ও রেলপথে নানা বিড়ম্বনার কারণে তারা সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকেই উড়োজাহাজে উঠছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিমানে এখন আসন পাওয়াই কঠিন।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য থার্ড ক্যারিয়ারে বিদেশগামী যাত্রীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। আগে এসব যাত্রী ঢাকা থেকে ফ্লাই করতেন। সম্ভবত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ছুটিতে দেশে আসা প্রবাসীরা ছুটি শেষ হওয়ার আগেই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশজুড়ে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ট্রেন বা বাসে ঢাকা যাওয়া-আসাকে নিরাপদ মনে করছেন না। তাই অনেকে আকাশপথে ঢাকা যাওয়া-আসাকে নিরাপদ মনে করছেন।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ : বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিমানগুলো প্রতিটি রুটে 'ফুল ফ্লাইট' যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ দেশের আটটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে দিনে ১০টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে। প্রতিটি ফ্লাইটেই পুরো আসনের যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে উড়ছে ইউনাইটেডের বিমান। ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-সৈয়দপুর রুটের প্রতিটিতে দিনে তিনটি করে আসা-যাওয়ায় ছয়টি ফ্লাইট চালায় ইউনাইটেড। এগুলোও ফুল লোডেড। এ ছাড়া ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কঙ্বাজার ও ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটের প্রতিটিতে দিনে দুটি করে চারটি ফ্লাইট চালায় ইউনাইটেড। ঢাকা-রাজশাহী রুটে দিনে একটি করে আসা-যাওয়ায় দুটি ফ্লাইট চলে ইউনাইটেডের। জানা গেছে, সব কটি রুটেই সব আসন পূর্ণ করে যাতায়াত করছে বিমানগুলো।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ : বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজও ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আসা-যাওয়ায় দিনে ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এ ছাড়া ঢাকা-যশোর-ঢাকা রুটে দুটি করে চারটি এবং ঢাকা থেকে সিলেট ও কঙ্বাজার রুটে দিনে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা কিছু দিন ধরে যাত্রীদের খুব চাপের মধ্যে আছি। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সড়ক ও রেলপথে যারা যেতে পারছেন না তারা এসে ভিড় করছেন বিমানে যেতে। উল্লেখ্য, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তাদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটে যাত্রী ভাড়ায় ৫০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা ঘোষণা করেছে। যাত্রী বেড়ে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিমানটির কর্মকর্তা।

নোভো এয়ার : অপর বেসরকারি বিমান নোভো এয়ার ঢাকা-চট্টগ্রাম গন্তব্যে আসা-যাওয়ায় দিনে ১০টি ফ্লাইট চালায়। এ ছাড়া তারা ঢাকা-কঙ্বাজার-ঢাকা রুটে দিনে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। নোভো এয়ারের ফ্লাইটেও যাত্রীদের অত্যধিক ভিড় বলে জানা গেছে। আমাদের কঙ্বাজার প্রতিনিধি জানান, অবরোধ-হরতালে একেবারে পর্যটনশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কঙ্বাজার। এ কারণে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আসা কঙ্বাজারের বাইরের যাত্রীদের সংখ্যা খুবই কম। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এখন বাসের পরিবর্তে বিমানেই যাতায়াত করছেন। কঙ্বাজার থেকে প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট চালায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ার।

সর্বশেষ খবর