সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
ক্ষমা ক্ষতিপূরণ ন্যায্য হিস্যা ও প্রত্যাবর্তন

চার দাবিতে অনড় বাংলাদেশ, ভ্রুক্ষেপ নেই পাকিস্তানের

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ক চার দাবিতে বাংলাদেশ অনড় রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই পাকিস্তানের। কূটনীতিকদের মতে, মূলত ঐতিহাসিক চার ইস্যুর কোনো সুরাহা না হওয়াতেই গতিশীল হচ্ছে না বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারির নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকা এসেছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত। জিয়া এম ইস্পাহানিকে বাংলাদেশের এ চার দাবির কথা স্পষ্টই জানিয়ে দেন তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে বছর একই কথা জানানো হয় ঢাকার পাকিস্তানের হাইকমিশনার আলমগীর বাশার খান বাবরের কাছে। পরের বছর ২০১০ সালে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র সচিবদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বাংলাদেশের দাবির কথা পুনরায় উল্লেখ করা হয়। আর সর্বশেষ ২০১১-তেও ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার আফরাসিয়াব মেহদী হাশমির কাছেও পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশের দাবি, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়। এ জন্য বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আসা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে রক্ষিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই অর্থ আত্দসাতের উদ্দেশে স্টেট ব্যাংকের লাহোর শাখায় স্থানান্তর করা হয়। ওই অর্থ সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের আগে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রায় ৪৩২ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের হিস্যার জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ এবং সমতার নীতি অনুসরণ করলে ৫০ শতাংশের দাবিদার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আরেকটি দাবি আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ২০০৬ সালে জাতিসংঘে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সমীক্ষা অনুযায়ী সে সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানির সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, বাংলাদেশের এই চার ইস্যুতে পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। বিশেষ দূত ও হাইকমিশনার বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে তার সরকারকে জানানোর কথা বলে দায়িত্ব শেষ করেছেন। তবে সচিবদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের দাবিগুলো শুধু স্পর্শকাতরই নয়, বিষয়গুলো বেশ জটিল। তবে দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের দাবিগুলো নিয়ে পাকিস্তান আলোচনা করতে আগ্রহী। অবশ্য এরপর আর কোনো আলোচনা হয়নি বলে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে একসময় জড়িত থাকা সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের কাছে আমাদের দাবিগুলো ন্যায্য। শুরুতে পাকিস্তান সেগুলো স্বীকার করলেও পরে তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আটকে পড়া পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সমস্যা। নেওয়াজ শরিফের সরকার সৌদিভিত্তিক জামাতুদ-দাওয়ার অর্থায়নের মাধ্যমে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু জামাতুদ-দাওয়া অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার পর আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়াও থেমে যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর