বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

আলোচনায় হেরে যাওয়া ও কারচুপি করা নেতারা

আলোচনায় হেরে যাওয়া ও কারচুপি করা নেতারা

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য, মন্ত্রী, এমপিরা এখনো অলোচনায়। পাশাপাশি ব্যাপক কারচুপি করে যাদের জিততে হয়েছে তারাও সমালোচনার বাইরে নন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা কাজী জাফর উল্লাহ, বহুল আলোচিত সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ বর্তমান আট এমপি হেরে গেছেন। অন্যদিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ অনেকের বিরুদ্ধে। 
হেরে যাওয়া প্রার্থীদের অধিকাংশই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। তারা গত পাঁচ বছরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও নিজ এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মন জোগাতে পারেননি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে রেখেছিলেন। যে কারণে দলের বহু নেতা-কর্মী সমর্থন দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তাদের শোচনীয় পরাজয়ের কারণে দলের তৃণমূলের চরম নাজুক সাংগঠনিক অবস্থাও ফুটে উঠেছে দলের হাইকমান্ডের কাছে। 
দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ভোট কারচুপির কারণে সরকার ও দলকে চরমভাবে বিতর্কিত করেছে বলে মনে করছে দলের হাইকমান্ড। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা জোরপূর্বক ভোট না কাটলেও পারতেন। পাঁচ বছর তারা এলাকায় কী করেছেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে তাদের ভোট কেটে এমপি হতে হবে? এতে দল ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এমপি-মন্ত্রীদের এলাকায় গিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং জনসমর্থন বাড়াতে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার এ নির্দেশ মানেননি অনেকেই। তারা ঢাকায় বসে এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন গুটিকয়েক নেতাকে দিয়ে। এ কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যার ফল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীসহ আটজন এমপির পরাজয় হয়েছে।
শেরপুর-২ আসনে ৫০টি কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর ক্যাডাররা। দুপুরের আগেই এ অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদশা। 
প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছেলে আশিক আল শামস রঞ্জন ও ভাই আবদুল বাতেনের সহায়তায় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ব্যাপক ভোট ডাকাতি করে পাবনায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাবনা-১ আসনের ৫২টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনর্নির্বাচন চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। 
ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান নিঙ্ন চৌধুরীর কাছে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে দলের প্রভাবশালী নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর। ঢাকা-৭ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিমের কাছে। ঝিনাইদহ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি শফিকুল ইসলাম হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকীর কাছে। পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজীর কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। কুষ্টিয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফাজ উদ্দীন প্রায় ১০ হাজার ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর কাছে। মৌলভীবাজার-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মতিনের কাছে হেরেছেন মহিবুল কাদির চৌধুরী। কুমিল্লা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের কাছে হেরেছেন দলীয় প্রার্থী আহসানুল আলম কিশোর। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির ঊষাতন তালুকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদারকে। নরসিংদী-৩ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হক ভূঞা স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলামের কাছে হেরে গেছেন। গাইবান্ধা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে। নওগাঁ-৩ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকরাম হোসেন চৌধুরী পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দীন তরফদারের কাছে। মেহেরপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ খালেককে।

সর্বশেষ খবর