বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

নাশকতায় লণ্ডভণ্ড রেলের শিডিউল

নাশকতায় রেলপথের শিডিউল আবার লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। মাঝে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গতকালও রেলওয়ের ফিশপ্লেট খুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা নিয়ে উদ্বিগ্ন রেল প্রশাসন রেলওয়ের অন্যান্য রুটেও রেল চলাচলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিয়ে দেওয়া হয়েছে রেল চলাচলের স্বাভাবিক গতি। ফলে, নির্ধারিত সময়ে রেল ছেড়ে যাওয়া ও গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, শিডিউল রক্ষার চেয়ে নিরাপত্তার দিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন যাতায়াতের আগে রেলওয়ের শাটল ট্রেন নাশকতার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে। গতকাল রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে এক তৃতীয়াংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে স্টেশনে পৌঁছে এবং ছেড়ে যায় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, নিরাপত্তা ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেলের যাত্রী সংখ্যাও অস্বাভাবিক পরিমাণ কমে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে মাসে প্রায় ২০ কোটি যাত্রী পরিবহন করে। দিনে প্রায় ৬৫ লাখ যাত্রী রেলপথের সেবা নেয়। কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় রেলপথের নাশকতায় সেই যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে কমলাপুর স্টেশন থেকে দিনে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। কিন্তু গত দুই মাসে কমলাপুর থেকে দিনে এক তৃতীয়াংশ যাত্রীও ট্রেনে চড়েননি। বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলা, ফিশপ্লেট তুলে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা ট্রেন যাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি জনবল সংকট রেলওয়ের একটি স্থায়ী সমস্যা। জনবল সংকটেও রেলওয়ের শিডিউল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্টেশন মাস্টারের পদ পূরণ না হওয়ায় একে একে প্রায় ৭৫টির বেশি রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্ধ হয়েছে পশ্চিম জোনে, মোট ৬২টি। পূর্বাঞ্চলীয় জোনে বন্ধ হয়েছে ১৩টি স্টেশন। আরও কিছু স্টেশন বন্ধ হওয়ার পথে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, জনবল সংকট নিরসন না হলে এসব স্টেশন চালু হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন পরিচালনার জন্য স্টেশন রয়েছে ৪৩৫টি। এসব স্টেশনের বিপরীতে স্টেশন মাস্টারের প্রয়োজনীয় পদের সংখ্যা ১১৪৪টি। অনুমোদিত এই পদের মধ্যে বর্তমানে স্টেশন মাস্টার রয়েছেন ৭১৬ জন। চাকরি থেকে অবসর, মৃত্যু এবং অন্যান্য কারণে বর্তমানে স্টেশন মাস্টারের ৪২৮টি পদ শূন্য রয়েছে। কর্মী সংকট এবং ইঞ্জিন স্বল্পতার কারণে প্রতিদিনই বিভিন্ন রুটে সার্ভিস বাতিল করতে হচ্ছে। জনবল ঘাটতিতে স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা, ট্রেন পরিচালনা, ট্রেনের শিডিউল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এর পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনের নিয়মিত যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলওয়ের অধিকাংশ লাইনই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণর্। রেললাইনের বেশিরভাগ স্লিপার ভাঙা। স্লিপার ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বোল্ট বা ক্ল্যাম্প নেই। স্লিপারের নিচে ৬ ইঞ্চি পুরু পাথর থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ লাইনে কোনো পাথরই নেই। রেলপথের শাখা লাইনগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। সাধারণ কাঠ দিয়ে তৈরি স্লিপারে আলকাতরা লাগিয়ে গর্জন, শাল কাঠ বলে লাইনে ব্যবহার করা হয়েছে। আর অধিকাংশ স্টেশনেই সিগন্যালিং ব্যবস্থা মধ্যযুগীয়। এদিকে বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের মূল্যবান জমি ও রেল লাইন দখল করে বাজার, বস্তি ও অন্যান্য স্থাপনা বসানো হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না ট্রেন। এসব কারণে ট্রেনের শিডিউল রক্ষা করতে পারছে না রেলওয়ে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেলওয়ের শিডিউল সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক নাশকতায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা রোধের স্বার্থেই ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে। এ জন্য ট্রেন শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না।

 

 

সর্বশেষ খবর