বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

স্কুলটিকেই বদলে দিলেন প্রধান শিক্ষক

স্কুলটিকেই বদলে দিলেন প্রধান শিক্ষক

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের একটি গ্রাম জুগিন্দা। নিরক্ষর অভাবগ্রস্ত এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই গ্রামের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে খুব একটা উৎসাহিত নন। এ কারণে গ্রামের 'জুগিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'ও শিক্ষার্থী পায় না। এ অবস্থা চলছে অনেক বছর। বছরচারেক আগে এ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন তোরিফা নাজমিনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। এ দরিদ্র গ্রামের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার বাইরেও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার চিন্তা শুরু করেন তিনি। কিন্তু এ জন্য বাড়তি টাকার দরকার। তার চিন্তা আর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ব্যাস, তার এ মহৎ চিন্তার সঙ্গে একাত্দতা ঘোষণা করেন অনেকে। অনেকে আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ফেসবুক বন্ধুদের দেওয়া সহযোগিতায় বছরে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চলছে শিশুদের স্কুলমুখী কার্যক্রম। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন প্যারা শিক্ষক। এখন গ্রামের শতভাগ শিশু স্কুলমুখী, পাসের হারও শত ভাগ। এ পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য প্রতি মাসে স্কুলে ডাকা হয় অভিভাবক ও মা সমাবেশ। গ্রামের জনপ্রতিনিধি জাফর আলী জানান, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ফলে অভিভাবকরা প্রথম দিকে তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করালেও পরে তা ধরে রাখতে পারেন না। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে বেশির ভাগ পরিবারের ছেলে-মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলের সভাপতি সালাউদ্দীনও জানালেন একই কথা। প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়া প্যারা শিক্ষক নার্গিস আক্তার জানান, স্কুল ছুটির পর বিকালে আরও দুই ঘণ্টা ছেলেমেয়েদের নিয়ে ক্লাস করান; যাতে তারা স্কুলমুখী হতে ভয় না পায়। প্রতি মাসে প্রধান শিক্ষক তাকে ৪ হাজার টাকা বেতন দেন, যা তার দিয়ে তার সংসার চলে। স্কুলের সহকারী শিক্ষক ইমদাদুল হক জানান, বছরের শুরুতে স্কুল শিক্ষার্থীতে ভরে যায়। কিন্তু পরীক্ষার আগে ৫০% শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। প্রধান শিক্ষকের এ উদ্যোগে দুই বছর ধরে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এবং ফলাফলও ভালো। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তোরিফা নাজমিনা জানান, তিনি যখন এ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুব নাজুক। এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য তিনি ফেসবুকে বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করেন। পরবর্তীতে বেশকিছু বন্ধু এগিয়ে এলে নিজের বেতনের কিছু অংশ ও বন্ধুদের পাঠানো কিছু অর্থ দিয়ে মাসে ৪ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ করেন একজন প্যারা শিক্ষক। এর পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তিনি আরও জানান, এখন আর স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে না, অভিভাবকরাও সচেতন হয়েছেন। এ বছরে অভিভাবকরা ঘোষণা দিয়েছেন তাদের সহযোগিতায় চলবে বিদ্যালয়। এ জন্য এরই মধ্যে আরও চারজন প্যারা শিক্ষক এগিয়ে এসেছেন। তারা হলেন হামিদা আক্তার, আরিফা, চম্পা ও হাদিসা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তৌফিকুজ্জামান জানান, প্রধান শিক্ষিকার এ উদ্যোগ একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি মনে করেন সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা যদি আরেকটু বৃদ্ধি করা যায় তবে দেশে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে।

 

 

সর্বশেষ খবর