বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

হরতাল-অবরোধেও রাজধানীর জনজীবন স্বাভাবিক

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধে আতঙ্ক থাকলেও রাজধানীর জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। নগরীর রাজপথেও চলাচল করেছে বিপুলসংখ্যক যানবাহন। কমতি ছিল না ব্যক্তিগত যানবাহনেরও। অন্য সব স্বাভাবিক দিনের মতো গতকাল রাজধানীর অনেক সড়কে রীতিমতো যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও আতঙ্ককে জয় করে গতকাল মার্কেট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ যেন এক অন্য রকম হরতাল! তবে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে না গেলেও স্বাভাবিক নিয়মেই চলেছে ট্রেন। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবিরাম অবরোধ কর্মসূচির অষ্টম দিন এবং হরতালের পঞ্চম দিনে সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘর্দিন ধরে হরতাল-অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ধৈর্যের বাঁধ যেন আর মানছিলই না। জীবনের তাগিদেই যেন তারা হুমড়ি খেয়ে বেরিয়েছিলেন কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে। কোনো বাধা তাদের রুখতে পারেনি। তবে ভিআইপি রোডসহ রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা ছিল রিকশার দখলে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক কিংবা গলিতেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পান্থপথ বৌবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, 'সবকিছু আমাগো সইয়া গেছে ভাই! কিন্তু মানুষের জীবন যে ধ্বংস হইয়া যাইতাছে হেই দিকে কেউর খেয়াল নাই। যেইভাবে চলছে, এইটা চলতে থাকলে মানুষরে আর ঘরে আটকাইয়া রাখা যাইব না। মানুষ কয় দিন বইস্যা থাকব?' হরতাল-অবরোধে নিজেদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে মতিঝিল বক চত্বরে রবিন আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন হয়েছে। সরকার গঠন হবে। বিরোধী দল গতানুগতিক হরতাল-অবরোধের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। সরকার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে কঠোর হবে। বিএনপি নেতাদের ধরছে, ছাড়ছে। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে বড় নাশকতার অভিযোগ উঠছে, সেই জামায়াতের কাউকে গ্রেফতার করতে দেখছি না।' বেসরকারি এক ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজমুল হক রানা বলেন, সত্যি আমরা এক আজব দেশে বাস করছি। দেশে এখন মানুষ মরছে পাখির মতো। বাসে-ট্রেনে কোথাও শান্তি নেই। পুলিশও যাকে-তাকে গুলি চালাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে হরতাল ডাকা দলের নেতা-কর্মীরাই মাঠে নেই। কপালে যে আমাগো কী আছে! গতকাল সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে উত্তরাগামী বেসরকারি এক অফিসের চাকুরে নাজমুল হোসেন নবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বিরোধী দলের নেতারা হরতাল-অবরোধ ডেকে বাসায় ঘুমান। আর আমাদের অফিসে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আর রাস্তায় বেরোলে কখন শরীরে ককটেল বা পেট্রলবোমা পড়ে, সেই আতঙ্কে থাকি।'

ধানমন্ডির জেনেটিক প্লাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অবরোধের মধ্যেও মার্কেট খোলা রয়েছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। তারপরও ক্রেতার আশায় আমাদের খোলা রাখতে হচ্ছে। মালিকরা এখনো কর্মচারীদের ডিসেম্বরের বেতন দিতে পারেননি। কবে দিতে পারবেন, সেটাও জানা নেই।' বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাতের দোকানি কামাল হোসেন বললেন, 'বেচাকেনা খুবই কম। শীতের কাপড়-চোপড় কিছুটা বিক্রি হচ্ছে। কাস্টমাররাও বুঝে গেছেন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। তাই অনেক দামাদামি করেন। বাধ্য হয়েই কিছুটা পড়তা হইলেই ছাইড়া দেই। তবে ক্রেতা বাড়ব বলে আমাগো আশা।' দূরপাল্লার যানবাহনের টিকিট কাউন্টারগুলো গতকাল ছিল যাত্রীশূন্য। পরিবহন কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, 'নিরাপত্তাজনিত কারণে' তারা গাড়ি ছাড়ছেন না। ১ জানুয়ারি থেকে অবিরাম অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলছে।

সর্বশেষ খবর