শিরোনাম
রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

বেড়ায় খাবে সংসদ ভবনের ঐতিহ্য

বেড়ায় খাবে সংসদ ভবনের ঐতিহ্য

সরকারের এক মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদ ভবনকে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের ইউনেস্কোতে যখন চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন সরকারের আরেক মন্ত্রণালয় চাইছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নির্মাণ বন্ধ রাখা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের দ্রুত রায়। এ ছাড়া সংসদ এলাকা ঘিরে চারদিকে দেয়াল নির্মাণের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে ঠিকাদারকে। আর এই দরপত্র ১০ কোটি টাকার। আর এ অবস্থায় স্থাপত্যবিদেরা অভিযোগ তুলেছে মাত্র ১০ কোটি টাকার টেন্ডারের কাছে পরাজিত হতে চলছে একটি জাতীয় উদ্যোগ। আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে সরাসরি।

একটি বিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সংসদ ভবন এলাকায় সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে আদালত সংসদ ভবনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য ঘোষণারও উদ্যোগ নিতেও সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছিল। এ ছাড়া নতুন করে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ শুরু না করারও নির্দেশনাও তাতে ছিল। বাংলাদেশ স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বির হাসান বলেন, আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনের চারদিকে বর্তমানে যে দেয়াল ও লোহার বেষ্টনী নির্মাণের কাজ চলছে- এটাকে আমরা কী বলব আদালত অবমাননা নাকি ঐতিহ্য অবমাননা। সরকার কি সংসদ ভবনকে কোনো হ্যারিটেজই মনে করে না? নাকি তারা সংসদ ভবনকে আর দশটি ভবনের মতো একটি সাধারণ স্থাপনা মনে করে। নতুবা আদালতের রায় বহাল থাকা অবস্থায় এই টেন্ডার হয় কী করে? হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আপিলই বা করে কী করে? আপিল করার অর্থ কী দাঁড়ায় হাইকোর্ট বলেছে সংসদ ভবন হ্যারিটেজ। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা মনে করছে না। তিনি জানান, গত বছর সংসদের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে আমরা স্থাপত্য ইনস্টিটিউটসহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছি তা এখনো অব্যাহত আছে। সবার অভিযোগ, নিরাপত্তা বেষ্টনীর নামে লুই আইকানের মূল নকশায় আঘাত করা হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নকশার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান। তখনই মূল নকশার 'কিছু অংশ' বাংলাদেশের কাছে না থাকার বিষয়টি উঠে আসে। স্থাপত্য অধিদফতর প্রধানমন্ত্রীকে জানায়, লুই কানের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ ভবনের কাজের জন্য বাংলাদেশের কাছে এখনো ৮৭ লাখ টাকা পাবে। এ কারণে মূল নকশা সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই বাংলাদেশের হাতে নেই। স্থাপত্য অধিদফতরের এ সংক্রান্ত দাবি হেসে উড়িয়ে দিয়ে স্থপতি মোবাশ্বির হাসান বলেন, নকশা আদালতের কাছেই জমা দেওয়া আছে। স্পিকারের বাস ভবন নির্মাণের সময় আমরা বাংলাদেশ স্থাপত্য ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার পক্ষ থেকে যখন মামলা করেছিলাম তখন লুই আই কানের নকশার কপিও আদালতে জমা দিয়েছিলাম। সংসদ সচিবালয়ের কাছে জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা না থাকার বিষয়ে সংসদের জ্যেষ্ঠ সচিব আশরাফুল মকবুল বলেন, সংসদ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যেহেতু গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সেহেতু এই ভবনের পুরোনো কাগজপত্র নকশাদি তাদের কাছেই থাকে। তিনি জানান, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বিষয়ে সভা হয়েছে। সরকার মূল নকশা আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি অফিশিয়ালি অনুমোদন পেলে এ বিষয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট ল' ইয়ার অ্যাসোসিয়েশন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজোয়ানা হাসান বলেন, যারা সংসদ ভবনের নকশা পরিবর্তন করতে চায় তারাই লুই আই কানের মূল নকশা নেই বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ নকশা না থাকলেই তো তাদের লাভ। তারা যেভাবে চায় সেভাবে ভবনের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারবে। তাই নিজেদের লাভের জন্য তারা নকশা গায়েব করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে নকশা নেই ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর