রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

শিক্ষার বালাই নেই মূল লক্ষ্য বাণিজ্য

শিক্ষার বালাই নেই মূল লক্ষ্য বাণিজ্য

বনানীতে ভাড়া বাড়িতে একটি ইউনিভার্সিটি। বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস কেউ বনানীতে আবার কেউ বা বলেন কারওয়ান বাজারে। তবে রাজধানীতে এর চারটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এগুলো কারওয়ান বাজার, মিরপুর রোড, বনানী ও মোহাম্মদপুরে। কারওয়ান বাজার ক্যাম্পাসে আইন ও ইংরেজি বিভাগ রয়েছে। মিরপুর রোডের ক্যাম্পাসে ফার্মাসি ও বাকি দুটিতে বিবিএ-এমবিএ-এর কোর্স পড়ানো হয়। এ ছাড়াও খুলনা ও রাজশাহীতে রয়েছে আরও দুটি ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা প্রতিটি ক্যাম্পাসই পূর্ণাঙ্গ ইউনিভার্সিটি বলে জানিয়েছেন। প্রতিটিতে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী আছে। এটি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উদাহরণ মাত্র। এমন অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যাদের রয়েছে একাধিক ক্যাম্পাস। আইনে আউটার ক্যাম্পাস অবৈধ হলেও তোয়াক্কা করে না কেউ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ক্ষমতাধরেরা পক্ষে থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করেও পার পেয়ে যায়। এদিকে আইনে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বলা হলেও বাস্তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। ব্যক্তিস্বার্থে একেকজন খুলেছেন একেকটি ক্যাম্পাস। গঠন করেছেন আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড। জয়েন স্টক থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদনও বাগিয়েছেন। সূত্র জানায়, আইনত প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (ট্রাস্টি বোর্ড) থাকবে। এর মধ্য থেকে একজন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটিতেই দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ রয়েছে। এ সুযোগে প্রতিটিতে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ও সনদ দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে ৭৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর বড় একটি অংশকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়ায় মালিকানা নিয়ে বিপত্তি বাধলেও সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে না। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন নিয়ে এখনো এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা যায়নি। শুধু রাজধানীতে ৪২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে ভাড়া বাড়িতে। আর এসবের রয়েছে একাধিক ক্যাম্পাস। জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ই পড়ানো হয়। যেমন বিবিএ (অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট), এমবিএ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ত্রিপলি, ফার্মাসি, পাবলিক হেলথ ও ইংলিশ। সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগ চালু করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলেও বেসরকারিতে পায়। এসব প্রতিষ্ঠান মেধা যাচাই না করে অর্থের মানদণ্ডে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মালিকানার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আলাদা ক্যাম্পাস খুলে প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার নামে বাণিজ্য করছে। আউটার ক্যাম্পাস খুলে ব্যবসা করছে পিপলস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ আরও দশটি প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ব্যাপরে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, সরকারের নীতিগত ভুলের কারণেই উচ্চশিক্ষা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয় করে মোটা অঙ্কের কর দিতে হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জ্ঞান অর্জন ও নিত্যনতুন জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেই তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর