রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা
প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্ক

জিয়াউর রহমানের প্রথম কথিত ভাষণ ইতিহাসে অপাঙ্‌ক্তেয়

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান তার দেওয়া প্রথম কথিত ভাষণে নিজেকে রাষ্ট্রপতি (হেড অব প্রোভেন্সিয়াল এস্টেট) ও লিবারেশন আর্মির প্রধান হিসেবে দাবি করলেও তার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। জিয়াউর রহমানের এ ধরনের ভাষণ প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ড. এ আর মলি্লক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এ আর খান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য টেলিফোনে কথা বলেন। তারা জিয়াউর রহমানকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, জিয়াউর রহমানের দেওয়া প্রথম ভাষণ আসলে দুই দেশের মধ্যে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কিংবা গৃহযুদ্ধ হিসেবে বিশ্বে বিবেচিত হবে। রাজনৈতিক, সাংবিধানিক এবং সামাজিক দিক থেকে বিবেচনা করলে জিয়াউর রহমানের কথিত ভাষণটি ছিল আত্দঘাতী। কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তা ছিল জনযুদ্ধ ও রাজনৈতিক যুদ্ধ। জিয়াউর রহমান এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক ঐতিহাসিক ভুল থেকে নিজেকে বাঁচান। তিনি তার দেওয়া প্রথম ভাষণটি প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়াউর রহমান তার দেওয়া প্রথম ভাষণ প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দুবার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, আজ যারা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করছেন তারা ঠিক বলেননি। কারণ একটি রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করতে তিনটি বিষয় বিবেচিত হয়, যার কোনোটিই জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যে তিনটি বিষয় বিবেচনায় আনা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- এক. জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। দুই. এমনও হতে পারে সামরিক ক্যু করে রাষ্ট্রপতি এবং তিন. গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে বসাতে পারে। এটি ইতিহাসে আছে। রাজা গোপালকে এভাবেই রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয়েছিল। এর কোনোটিই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন এবং অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। অষ্টম রেজিমেন্টসহ তাকে পাকিস্তানে বদলি করা হয়েছিল। এ সময়ে জিয়াউর রহমানের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল জানজুয়া। পাকিস্তান সেনা অধিনায়কের কাছ থেকে নির্দেশিত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাত ১১টা ২০ মিনিটে পাকিস্তানের অনুগত হয়ে সোয়াদ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে প্রচণ্ড আন্দোলন, সংগ্রাম ও ব্যারিকেডে পড়লে জিয়াউর রহমান আর এগুতে পারেননি।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে ইপিআরের ক্যাপ্টেন রফিক তার সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান জিয়াউর রহমানকে প্রতিরোধ যুদ্ধের খবর দেন এবং বলেন, তিনি বন্দরে গেলেই তাকে হত্যা করা হবে। জেনারেল আনসারী তাকে হত্যা করবেন। এ খবর পেয়ে জিয়াউর রহমান অষ্টম রেজিমেন্টের প্রায় ২০০ সৈন্য একত্রিত করে বলেন, উই রিভোল্ট, কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।

অধ্যাপক সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন মুজিবনগর সরকারের অধীনেই মেজর জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন, বেতন-ভাতাদি নিয়েছেন, কাজেই তিনি কীভাবে রাষ্ট্রপতি হতে পারেন? এই দাবি করে বরং জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে ছোট করেছেন এবং জিয়াউর রহমানকে অপমানিত করেছেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জীবিত থাকাবস্থায় কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক, সেনাপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপতি দাবি করেননি।

 

সর্বশেষ খবর