বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

কায়সারের রায় যে কোনো দিন

কায়সারের রায় যে কোনো দিন

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এরশাদ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মামলার রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন। যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। একই সঙ্গে জামিন বাতিল করে কায়সারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমাণ রায়ের তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি মামলা। এর বাইরে আরও চারটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে কায়সারের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে প্রসিকিউশন। আর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে অভিযুক্তের খালাস চেয়েছে আসামি পক্ষ। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সচেতনভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে অপরাধ করেন। তিনি তখন ড্রাগনের ভূমিকা পালন করেন। একই সঙ্গে কায়সারের সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি একাত্তরে তার অপরাধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণেরও আবেদন জানান এই প্রসিকিউটর। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, একাত্তরে কায়সার বাহিনী স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীর ভূমিকা পালন করেছে। কায়সার বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ পোশাক ছিল এবং সে বাহিনীতে উচ্চপদস্থদের নির্দেশ ছিল। আসামি পক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, কায়সারের বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তিনি খালাস পাবেন বলে আশা করছি।

যত অভিযোগ : প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া (তৎকালীন মহকুমা) সদরের পুলিশ ফাঁড়ি ও ইসলামপুর গ্রামের কাজীবাড়িতে শাহজাহান চেয়ারম্যানকে হত্যা, নায়েব আলীকে জখম এবং লুটপাট করেন কায়সার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। দ্বিতীয় অভিযোগ : ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জের (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর বাজারের পশ্চিমাংশ ও পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন আসামি ও তার লোকজন। এ সময় প্রায় ১৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৃতীয় অভিযোগ : ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অহিদ হোসেন পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে হত্যা করেন আসামি ও তার লোকজন। তাদের বাড়িঘরে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। চতুর্থ অভিযোগ : কায়সার ও তার বাহিনী ’৭১ সালের ২৮ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর বাজারের উত্তর-পূর্ব অংশে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় তারা পূর্ব মাধবপুরের আবদুস সাত্তার, লালু মিয়া ও বরকত আলীকে হত্যা করেন এবং কদর আলীকে জখম করেন। পঞ্চম অভিযোগ : ২৯ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকায় আবদুল আজিজ, রেজাউল করিম, আবদুর রহমানসহ কয়েকজনকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করেন কায়সার ও তার বাহিনী। ষষ্ঠ অভিযোগ : ২৯ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের লস্করপুর রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করেন কায়সার ও তার বাহিনী। সপ্তম অভিযোগ : কায়সার ও তার বাহিনী ’৭১ সালের ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০-৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। অষ্টম অভিযোগ : ১১ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে সাঁওতাল নারী হীরামনিকে ধর্ষণ করেন কায়সার বাহিনীর সদস্যরা। কায়সার এ ধর্ষণে সহায়তা করেন। নবম অভিযোগ : ১৫ মে হবিগঞ্জের মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আবদুল আজিজ, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, নূর আলী চৌধুরীসহ কয়েকজনকে হত্যা করেন সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। দশম অভিযোগ : ১৩ জুন হবিগঞ্জ সদর, মোকামবাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর অ্যান্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহজীবাজার এলাকায় হামলা চালান কায়সার ও তার বাহিনী। এ সময় শাহ ফিরোজ আলীকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। একাদশ অভিযোগ : ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনের ওপর নির্যাতন চালান কায়সার ও তার বাহিনী। এ ছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করে তার বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দ্বাদশ অভিযোগ : কায়সার ও তার বাহিনী আগস্টের মাঝামাঝি কোনো একদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার বেলাঘর ও জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করেন। এক পর্যায়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়। ত্রয়োদশ অভিযোগ : ১৮ আগস্ট হবিগঞ্জের নলুয়া চা বাগান থেকে মহিবুল্লাহ, আবদুস শহীদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নরপতিতে আবদুস শহীদের বাড়ি ও রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় এবং কালাপুরের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যান কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। চতুর্দশ অভিযোগ : ২৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকা থেকে সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আবদুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যান কায়সার ও তার বাহিনী। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। পঞ্চদশ অভিযোগ : অক্টোবরের মাঝামাঝি হবিগঞ্জের মাধবপুরে শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ষোড়শ অভিযোগ : কায়সার ও তার বাহিনী ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবড়িয়ার ভাটপাড়া থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনাসহ কয়েকটি গ্রামের ১০৮ জনকে হত্যা করেন।

সর্বশেষ খবর