বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

যুবক গ্রাহকদের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

যুবক গ্রাহকদের ভাগ্য নির্ধারণে আজ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সচিবালয়ে। আন্তঃমন্ত্রণালয় এ বৈঠকটি ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুবকের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে গ্রহণ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও বিক্রি করে গ্রাহকদের দেনা-পাওনা পরিশোধে এ বৈঠকটি হবে। কোনো ধরনের আইনি বাধা না থাকলে প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে নিতে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তও হতে পারে বলে জানা গেছে।

বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর সঙ্গে গ্রাহকের হাজার কোটি টাকার স্বার্থ জড়িত। তাই এ ধরনের কাজ জটিল হলেও দেশের স্বার্থে বিষয়টি নিষ্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে কীভাবে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা যায় সে কৌশল খুঁজে বের করতেই বৈঠকটি ডাকা হয়েছে। যুবকসংক্রান্ত সরকারের স্থায়ী কমিশন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করেছে। সে অনুযায়ী ব্যাংকিং বিভাগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও লিখেছে। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগে আইনগত সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে ডেসটিনি জটিলতা কাটাতে সরকারিভাবে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে পিছিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিব বলেন, 'কোম্পানি আইনে প্রশাসক নিয়োগে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সে-সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখব।' কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতারণার মাধ্যমে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। বিপুল পরিমাণ ওই অর্থ নেওয়া হয় ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে। এ অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে ও সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন। দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত করে গত জুনে কমিশনের চেয়ারম্যান যুগ্ম-সচিব রফিকুল ইসলাম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ওই প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুবক গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে দুটি কমিশন গঠন করে। ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত প্রথম তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকদের পাওনা এবং সম্পত্তির হিসাব বের করে এসব সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের সুপারিশ জানায়। পরে ওই সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালের মে মাসে সাবেক যুগ্ম-সচিব রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় যুবকবিষয়ক স্থায়ী কমিশন। এ কমিশনের দায়িত্ব ছিল যুবকের সম্পদ আয়ত্তে নিয়ে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা করতে সমর্থ হয়নি কমিশন। শেষে গত বছরের জুনে যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে অর্থমন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে যুবক কমিশন। এদিকে কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী যুবকে প্রশাসক নিয়োগের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু এ প্রশাসক নিয়োগ নিয়েই দেখা দেয় জটিলতা। আইন মন্ত্রণালয় জানায়, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের নিবন্ধকের দফতর থেকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় যুবকে প্রশাসক নিয়োগের দায়িত্ব একমাত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। ওই মতামত পেয়ে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে ব্যাংকিং বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) আত্দপ্রকাশ ঘটে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি সোসাইটিজ অ্যাক্টের আওতায় নিবন্ধন নেয়। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক তদন্তে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা বেরিয়ে আসে। ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়সীমা ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু যুবক টাকা শোধ করেনি।

সর্বশেষ খবর