শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বর্ণিল সাজে কুমিল্লা

খালেদা জিয়ার জনসভা আজ

পাঁচ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যাওয়াকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় সাজ সাজ রব। পুরো কুমিল্লাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। আজ বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বেগম খালেদা জিয়া। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। জনসভায় পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে। সভায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে সড়কপথে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেবেন বিএনপি প্রধান। তার সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান একই গাড়িতে যাবেন। সফরসঙ্গী হিসেবে খালেদা জিয়ার বহরে থাকবেন ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল। এর আগে ভোরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অগ্রবর্তী দল কুমিল্লার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। জনসভাকে সফল করতে কয়েকদিন ধরে কুমিল্লায় অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ ১০ বছরের দ্বন্দ্বের আপাতত অবসান ঘটেছে। তারা এক প্লাটফর্মে এসে বেগম খালেদা জিয়াকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনসভায় বেগম জিয়া কুমিল্লার লাকসামের অপহরণ হওয়া বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মুক্তি এবং সরকার পতন আন্দোলনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করবেন বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিশ্র“তি দেবেন বলেও জানান তারা। দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ জনসভা হবে কুমিল্লার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভা। এ সভা থেকেই সরকার পতন আন্দোলন শুরু হবে।’ দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানান, ‘১৬টি উপজেলার ১১টি সংসদীয় আসন থেকেই ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী-সমর্থকরা সমাবেশে যোগ দেবেন। সমাবেশস্থল ও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ২২৬টি মাইক এবং নগরীর ছয়টি স্থানে বড় পর্দায় সমাবেশের অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আরেক প্রভাবশালী নেতা কাউসার জামান বাপ্পী বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বিভেদ ভুলে এক হয়ে যাওয়ায় নেতা-কর্মীরা উৎসবের আমেজে জনসভাকে সফল করতে কাজ করছে। এ জনসভায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জনসভা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপি একসঙ্গে বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে পুরো নগরীকে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে পুরো কুমিল্লায় দুই হাজারেরও বেশি তোরণ, নানা রঙের  পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও  প্লে-কার্ডে ঢেকে গেছে কুমিল্লার মুখ। এতে চাপা পড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির অধিকাংশ বিলবোর্ড। প্রচারণায় শোভা পাচ্ছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের ছবিও চোখে পড়ার মতো। কুমিল্লার জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে মতবিনিময় সভা। এ ছাড়া খোলা পিকআপ ভ্যানে চলছে গান গেয়ে প্রচারণা। জনসভা সফল করতে ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (জাফর), এলডিপি, লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টির প্রচারণাও লক্ষ্য করা গেছে। মহানগরীর মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে সদরের আলেখারচর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকায় দুই শতাধিক তোরণ তৈরি করা হয়েছে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ কুমিল্লায় এসেছিলেন।

সর্বশেষ খবর