শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম কলেজ ইস্যু

মহিউদ্দিন চৌধুরী অগ্নিপরীক্ষায়

চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার ‘সফল আয়োজক’ হিসেবে স্বনামখ্যাত তৃণমূলের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সামনে এখন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী শিবিরের ঘাঁটি উৎপাটনের আন্দোলন। চট্টগ্রামের রাজনীতিসচেতনরা মনে করেন, এই আন্দোলন মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
মহিউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য পরশুই আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের বলেছেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে না পারলে শাড়ি-চুড়ি পরে রাস্তায় নামতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে পিসপ্রতি ১২০ টাকায় ‘নাইলেন’ শাড়ি কিনে দেবেন বলে জানিয়েছেন। শতাব্দীর শিক্ষা ঐতিহ্যের স্মারক চট্টগ্রাম কলেজে বুধবার বামপন্থি শিক্ষকদের একটি ফোরামের সেমিনারে প্রধান অতিথি হন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অভিযোগ উঠেছে, সেমিনার আয়োজনে সহায়তা করেছে জামায়াত-শিবির। সেদিন মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে কলেজটির প্রধান ফটক মাড়িয়ে সেমিনার রুমে দূর থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি ছাত্রলীগ। শিবির ও পুলিশ যৌথভাবে কলেজটিতে ঢুকতেই দেয়নি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। শেষ পর্যন্ত প্রধান ফটকের বাইরে ছাত্রলীগ স্মারকলিপি দেয় শিক্ষামন্ত্রীকে। স্মারকলিপিতে কলেজকে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বলে আখ্যায়িত করে কলেজটিকে মুক্ত করার দাবি জানানো হয় মন্ত্রীর কাছে। এর পরদিন বৃহস্পতিবাররই ঘটে আরেক অঘটন। কলেজটির ইতিহাস বিভাগের প্রধান সিদ্দিক উল্লাহ খানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া সাধারণ ছাত্রদের মাঝ থেকে ছাত্রলীগ সমর্থক পাঁচজনকে ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে নির্যাতন চালায় শিবির। খরব পেয়ে ওপরের নির্দেশে তিন ঘণ্টার পুলিশি অভিযান চলে। এতে বেশকিছু বোমা, গোলাবারুদ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়। কিন্তু শিবিরের কারও টিকিটিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ! গতকাল চট্টগ্রাম কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের বিক্ষোভের ঢেউ গড়িয়ে যায় শহীদ মিনার পর্যন্ত। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে শিবিরে হাতে জিম্মি চট্টগ্রাম কলেজকে মুক্ত করার দাবিতে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রায় সবাই চেয়ে আছেন দলের মহানগর সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর দিকে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রতিও এ ক্ষেত্রে অনেকের প্রত্যাশা রয়েছে; কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নাছির কোনো উদ্যোগ নিতে ইচ্ছুক নন বলে জানান। এদিকে, রাজনীতিসচেতনদের অনেকের মতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম কলেজ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল সফল হতে না পারলে তার নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনেও পড়তে পারে। নির্বাচনে মনোনয়ন যার ভাগ্যোই জুটুক না কেন, ‘সাংগঠনিক দায়’ প্রধানত মহিউদ্দিন চৌধুরীরই। অন্যদিকে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভক্তদের ধারণা, রাজনৈতিক-সামাজিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্মরণকালের সব সফল উদ্যোগের মতো মহিউদ্দিনই পারেন কলেজটিকে শঙ্কামুক্ত ও এই ইস্যুতে দলকে জয়ী করতে। ‘বন্দরটিলা ট্র্যাজেডি’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংকট উত্তরণ ও স্বৈরাচারবিরোধী সফল আন্দোলনের মতো এ ক্ষেত্রেও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সফল দেখতে চান সমর্থকরা। মহিউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য এ প্রসঙ্গে ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম কলেজকে সন্ত্রাসীমুক্ত করতে ছাত্রদের প্রথম পদক্ষেপ শহীদ মিনারে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। কলেজটিকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিমুক্ত করতে শুরুতেই ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে সিলগালা করা দরকার।

সর্বশেষ খবর