শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
মায়ের অভিযোগ

পরকীয়ার জেরে টুনিকে খুন

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’র টুনি খ্যাত নায়ার সুলতানা লোপা আত্মহত্যা করেননি, স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। টুনির স্বামী আলী আমিন মাদক ও পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। আর স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে টুনিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টুনির মা রাজিয়া সুলতানা এসব অভিযোগ করেন। রাজিয়া সুলতানা বলেন, পুলিশের সুরতহাল ও ডাক্তারের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের মধ্যে অনেক গরমিল রয়েছে। যার কারণে প্রথমবার করা ময়নাতদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসেনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত টুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। টুনির দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে যেন প্রকৃত ঘটনা উঠে আসে এবং টুনি হত্যার সঠিক বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। রাজিয়া সুলতানা বলেন, ২০০০ সালে আলী আমিনের সঙ্গে টুনির বিয়ে হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন আলী মাদক ও পরকীয়ায় আসক্ত। টুনিকে হত্যার কিছু দিন আগে গুলশান ওয়েস্টিন হোটেলের সামনে আলী কয়েকজন বন্ধুসহ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সম্প্রতি সাজ নামে আমেরিকাপ্রবাসী এক মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরকীয়ায় জড়ান আলী। সাজ দেশে এলেই আলীর বাসায় চলে আসতেন। সারা রাত একসঙ্গে থাকার পর ভোরে গাড়ি দিয়ে সাজকে বাসায় পৌঁছে দিতেন। তার একাধিক পরকীয়ার বিষয় ধীরে ধীরে টুনির কাছে স্পষ্ট হতে থাকে।
রাজিয়া সুলতানা আরও বলেন, টুনিকে বিভিন্ন সময় স্বামীসহ তার পরিবার মানসিক নির্যাতন করতেন। ঘটনার দিনও টুনির শাশুড়ি ইয়াসমিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর জেরে টুনিকে হত্যা করা হয়। আর এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য টুনির লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। হত্যার আগেই আলী বাসার দলিল, ব্যাংকের চেক, লকারের চাবি, আইপ্যাড, প্রেমিকার দেওয়া উপহারসামগ্রীসহ মূল্যবান জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া আলী বাচ্চাদের বলেছিলেন তাদের মা সুইসাইড করবেন। ফলে তারা ভালো থাকবে।
রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আত্মহত্যা করলে গলার হাড় ভেঙে যেত কিন্তু তা ভাঙেনি। ঝুলন্ত অবস্থায় টুনির কোমরে ওড়না বাঁধা ছিল। কেউ নিজে ফাঁস নিলে তার কাপড় কোমরে পেঁচানো থাকার কথা নয়। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে হাত, কনুই ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার পুরোটাই চেপে যাওয়া হয়েছে। আলী ও তার পরিবার বিপুল পরিমাণ অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দিয়েছেন। সম্প্রতি আলী আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ১৬ অক্টোবর গুলশান-১, রোড-১২৬, বাড়ি-১২-এর সি-৩ ফ্ল্যাট থেকে টুনির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় টুনির মা রাজিয়া সুলতানা গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টুনির স্বামী আলী আমিন, শ্বশুর আমিন আলী ও শাশুড়ি ইয়াসমিনকে আসামি করা হয়। জানা গেছে, টুনি দম্পতির আনায়া (৯) ও আজারা (৬) নামে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা নানী রাজিয়া সুলতানার হেফাজতে রয়েছে।
 

সর্বশেষ খবর