বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সম্মেলনে বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান

দেশ ও জনগণের জন্য সাংবাদিকতা করুন

দেশ ও জনগণের জন্য সাংবাদিকতা করুন

বাংলাদেশ প্রতিদিনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মরহুম সৈয়দ আনসার আলীর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর   সোবহান বলেছেন, ‘সমাজে যা কিছু ক্ষতিকর তার বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান। দুর্নীতি-অনিয়ম, সন্ত্রাস, ইয়াবা কিংবা মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। এ কাজ করতে গিয়ে হয়তো জীবনও উৎসর্গ করা হতে পারে। সেজন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের জন্য সাংবাদিকতা করতে হবে।’
গতকাল সকালে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত ‘প্রতিনিধি সম্মেলন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মিডিয়া কমপ্লেক্সের কনফারেন্স রুমে সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল) চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিন পর্বে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনসহ বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি ও বিভাগীয় প্রধানরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের মৌলভীবাজারের সদ্য প্রয়াত প্রতিনিধি সৈয়দ আনসার আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা হাতিবুন্নাহারের হাতে তিন লাখ টাকা অনুদানের চেক তুলে দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা, সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সম্পাদকের পক্ষ থেকে নয়জন প্রতিনিধিকে অনুদানসহ ১৭ জনকে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়। বিকালে সর্বশেষ অধিবেশনে সাংবাদিকতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেলের সঞ্চালনায় এতে সাংবাদিকতার বিষয়ক নানা দিক নির্দেশনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস ও সাইফুল আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের। জেলা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার একটা বদনাম আছে। কাউকে কাউকে কম পয়সায় কেনাবেচা হয় বলেও দুর্নাম আছে। সে জিনিসটা সবাই মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। আমি আমাদের প্রতিটি গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টদের বলেছি, এ ব্যাপারে আপনারা সোচ্চার হন। প্রয়োজনে সাংবাদিকদের বেতন সুবিধা বাড়ান। কিন্তু কোনো মিথ্যা সংবাদ কিংবা কোনো ব্যক্তি স্বার্থের পক্ষে সংবাদ করা যাবে না। আমি চাই, আমাদের পত্রিকায় সংবাদ হবে বাস্তবধর্মী ও সত্য। কোনো মিথ্যা সংবাদ হলেই আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে বলেছি, তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। কারণ, কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না। এতে পত্রিকার পাশাপাশি আমারও বদনাম হবে।’
তিনি বলেন, ‘মফস্বল সাংবাদিকদের একটা যে দুর্নাম সেটা ঘোচানোর সময় এসেছে। অনেকেই মফস্বল থেকে বলেন, আমাকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটা কার্ড দেন, বেতন না হলেও চলবে। আমি আশা করি, আপনারা সে পথে না গিয়ে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করবেন। প্রয়োজনে ভারত কিংবা ঢাকায় আপনাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকতায় বলিষ্ঠ হন। আমাদের চারটি গণমাধ্যমের কেউ কোনো অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ এটা বলছে যে, এসব সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। এটা একটা বড় অর্জন। মফস্বলেও আমাদের এই গুণটা অর্জন করতে হবে।’  বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। কোনোকালে রাজনীতিও করিনি। একটাই রাজনীতি করি, যা কিছু করি, দেশের স্বার্থে করি। আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ সব সম্পাদকদেরকে বলেছি, আপনারা যা কিছু করবেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে করবেন। মানুষ মানুষের জন্য-এটাই আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ গণমাধ্যমে আসার পর আমি মনে করি, সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। আগে যেখানে দেখা যেত, যাদের বেতন কাঠামো কম ছিল, সেখান থেকে এখন উন্নতি হয়েছে। আমি আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে এটা আরও উন্নতি হবে। আমরা পরবর্তীতে একটি টেলিভিশন ও রেডিও নিয়েও কাজ করব। আশা করি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’ জেলা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেন, ‘এ পত্রিকাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পত্রিকাটি আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে প্রায় প্রতিদিনই বলি, উপরে যাওয়া সহজ, কিন্তু ধরে রাখা খুবই কঠিন। বাংলাদেশে এমন অনেক পত্রিকা আছে, যা আগুনের মতো জ্বলে উঠেছে, আবার হঠাৎ করেই পড়ে গেছে। আমরা চাই, পত্রিকাটি যেন আজীবন টিকে থাকে। এই পত্রিকার মাধ্যমে যেন দেশের মানুষের মঙ্গল হয়। এতেই রাষ্ট্রের উন্নতি। যেই সরকারই আসুন না কেন, আমি আপনি যদি কাজ না করি, তাতে কোনো কিছু হবে না।’ আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজকে সবাই মিলে যদি কাজ করি, তাহলেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। সাংবাদিকতা এমন একটা জিনিস, যার মাধ্যমে আপনি ১৬ কোটি মানুষকেই জানান দিতে পারবেন। আপনার একটা লেখা দেশ ও জাতির উপকারে আসতে পারে। সুতরাং আমরা মিথ্যার বেসাতি করব না-এই ব্যাপারে আমরা খুবই শক্ত। কয়েকজনের ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনারা অ্যাকশন নেন। একটা মিথ্যা সংবাদ একটি পত্রিকার ইমেজকে ধ্বংস করে দেয়।’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ ও মানুষের উপকারে আসে সেজন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আর এটাও সত্যি কথা, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক অতি অল্প সময়ে যে খ্যাতি অর্জন করেছেন তা ধরে রাখতে তাদের সারাজীবন সংগ্রাম করে যেতে হবে। এ জন্য তারাও ফুলটাইম কাজ করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সম্পাদক তার ছেলের মতোই মনে করেন। সেইভাবেই তিনি ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন। আপনারা সবাই মনে করবেন, এটা আপনাদের একটি প্রতিষ্ঠান। এটা দিয়েই আপনাদের সব সম্মান কিংবা বদনাম। সেজন্য চেষ্টা করবেন, যাতে আপনাদের কোনো বদনাম না হয়।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘পথ চলে সবাই, কিন্তু পথ দেখায় কেউ কেউ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের অর্থনীতি কিংবা মিডিয়ার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ পথ নির্দেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা আমাদের যেভাবে গাইডলাইন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আগামী দিনে বাংলাদেশ প্রতিদিন সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের, উপসম্পাদক মাহমুদ হাসান, মাকের্টিং অ্যাডভাইজার খন্দকার কামরুল হক শামীম, প্রধান বার্তা সম্পাদক মাশুক চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক কামাল মাহমুদ, লুৎফর রহমান হিমেল, প্রধান প্রতিবেদক শিমুল মাহমুদ, মফস্বল সম্পাদক শায়খুল হাসান মুকুলসহ বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রশংসাপত্র পেলেন যারা : চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহজাদা মিয়া আজাদ, খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক সামসুজ্জামান শাহীন, সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ দিদার আলম নবেল, বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক রাহাত খান, যশোরের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম পাবেল, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহফুজুর রহমান নোমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন, ফেনী প্রতিনিধি জমির বেগ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি গৌতমাশিস গুহ সরকার, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি শেখ রুহুল আমিন, নেত্রকোনো প্রতিনিধি আলপনা বেগম, রাঙামাটি প্রতিনিধি ফাতেমা জান্নাত মুমু, নাটোর প্রতিনিধি নাসিম উদ্দীন নাসিম, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি লাবলু মোল্লা।

সর্বশেষ খবর