শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সবজি উৎপাদনে বিপ্লব

সবজি উৎপাদনে বিপ্লব

সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এক যুগে বিপ্লব ঘটিয়েছে। দেশে এখন ৬০ ধরনের ২০০ জাতের সবজি উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও এ সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে শুধু সবজি রপ্তানি আয়ই বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। এতে বদলে গেছে প্রান্তিক কৃষকের জীবনযাত্রার মান, ঘুরে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা।
বর্তমানে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৯.২৯ ভাগ। কৃষি খাতে নিয়োজিত আছে ৪৭.৫ ভাগ জনশক্তি। ওয়াকিবহাল সূত্রমতে, আগে ভালো স্বাদের সবজির জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। টমেটো, লাউ, কপি বা বিভিন্ন পদের শাক শীতকাল ছাড়া বাজারে মিলত না। এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে কৃষকরাও সারা বছর চাষ করছেন বিভিন্ন জাতের সবজি। মানুষ সারা বছর পাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ জাতের সবজি। সূত্রমতে, আগে দেশের মধ্য, উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল সবজি চাষে কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। গত এক দশকে বাংলাদেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। এ হার বিশ্বে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)। অন্যদিকে দেশে সবজির উৎপাদন যেমন বেড়েছে, ভোগও তেমনি বেড়েছে। গত এক যুগে দেশে মাথাপিছু সবজির ভোগ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি সবজি রপ্তানি করেও মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা। গত এক বছরে শুধু সবজি রপ্তানি আয়ই বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত এক যুগে দেশের কৃষিজমির পরিমাণ বাড়েনি, তার পরও সবজির জমির পরিমাণ বাড়াচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে। এ পরিবারগুলোর প্রায় সবাই কম-বেশি সবজি চাষ করেন।
জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, বাড়ির উঠান, এমনকি টিনের চালায়ও কৃষকরা সবজির চাষ করছেন। এমনও দেখা গেছে, ফলবাগান ও বাড়ি-রাস্তার পাশের উঁচু গাছের মধ্যেও মাচা করে সবজির চাষ করছেন অনেক কৃষক। ফলে মোট কৃষিজমির পরিমাণ কমলেও সবজি চাষের এলাকা বেড়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্যাল ইয়ারবুক-২০১৩ অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশে। বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পরই রয়েছে নেপাল, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সিরিয়া ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। পাশাপাশি একই সময়ে সবজির মোট উৎপাদন বৃদ্ধির বার্ষিক হারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। শীর্ষস্থানে থাকা উজবেকিস্তানে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং নেপালে এ হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। আর আলু উৎপাদনের পরিমাণ ৯৬ লাখ টন। গত তিন বছরে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশের বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আর কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবজির রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি যায় সৌদি আরবে। এরপরই রয়েছে কাতার, ওমান, আরব আমিরাত, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

সর্বশেষ খবর