রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
সিটি করপোরেশন নির্বাচন

বিপাকে আওয়ামী লীগ ঘর গোছানো বিএনপির

কাউন্সিলর প্রার্থী

বিপাকে আওয়ামী লীগ ঘর গোছানো বিএনপির

আসন্ন ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি। অনেক বুঝিয়েও বসানো যাচ্ছে না বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে। অন্যদিকে বিএনপি অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে ঘর। অধিকাংশ স্থানেই তারা একক প্রার্থীকে সমর্থন দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর কয়েকটি ওয়ার্ডে সমস্যা থাকায় সেগুলোতেও পরিবর্তন এনে নতুন করে একক প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিগত সময়ে বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনারদের বড় অংশই বাদ পড়েছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী নিজ নিজ পক্ষে প্রচারে মাঠে নেমেছেন। দলীয়ভাবে বিভক্ত হয়ে তারা পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নতুন করে কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও বিএনপি তাদের কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে স্বস্তিতে, তারপরও অনেকেই প্রচারে এখনো মাঠে নামতে পারেনি। তাদের পক্ষে পরিবার ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। অভিযোগ আছে, তারা পোস্টার, লিফলেট বিতরণকালে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীনও হচ্ছেন।  আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ক্ষমতাসীন দলের জন্য এখন বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মূল মাথাব্যথার কারণ। বিদ্রোহীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে বসে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েও সংকট দূর করতে পারেনি দলের দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। ঢাকা সিটির ৯৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ৮০টিতেই একাধিক প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। এতে করে ভোট ভাগাভাগির আশঙ্কা রয়েছে। তাতে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বিজয়। ফলে মেয়র প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিজনক অবস্থানে থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে গলদঘর্ম আওয়ামী লীগ। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাবি, তারাই যোগ্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায়। মহানগরের অনেক থানা ও ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য অনেক আগে থেকেই তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি নিজ নিজ ওয়ার্ডে বহুদিন ধরেই তারা উন্নয়নমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। দলের জন্যও তারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অতীতে জেল, জুলুম সয়েছেন। এখন কেন্দ্র থেকে যদি দুর্বল, অসৎ, অগ্রহণযোগ্য ও দলে যাদের অবদান নেই তাদের সমর্থন দেওয়ায় তারা নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে মাঠে লড়ছেন।
দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কয়েকজন নেতা আলাপকালে জানান, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। আর বড় দল হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত যারা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে লড়বেন ব্যক্তিগতভাবেই তাদের নির্বাচন করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে পরে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দল ক্ষমতায় থাকলে নেতার অভাব হয় না। অনেক হাইব্রিড নেতা বিগত কয়েক বছরে টাকার মালিক বনে যাওয়ায় কেউ কারও নিয়ন্ত্রণ মানেনি। দক্ষিণের সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়ে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আজকালের মধ্যেই যারা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, তারা বসে যাবেন এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই প্রচার-প্রচারণায় নামবেন।
বিএনপি : কাউন্সিলর পদে অধিকাংশ স্থানেই একক প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি সমর্থিত আদর্শ ঢাকা আন্দোলন। অবশ্য এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় ৭০ ভাগই নতুন মুখের ছড়াছড়ি। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইজেমের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। ১৬টি ওয়ার্ডে প্রার্থী নিয়ে সমস্যা থাকায় সেখানেও নতুন করে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তাদের বুঝিয়ে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী বাছাই প্রক্রিয়ার পর প্রার্থী ঘোষণা করায় কয়েকটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় জামায়াতও পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। পরে তাদের সঙ্গেও বৈঠক করে জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেওয়া হয়। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারা জানান, নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মনোভাব বিবেচনা করেই অপেক্ষাকৃত তরুণ কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পেলেও ভোটের মাঠে থাকছেন সাবেক কাউন্সিলরদের অনেকেই।

বিএনপির সমর্থনের ভিত্তিতে গত ১০ এপ্রিল সাধারণ কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল আদর্শ ঢাকা আন্দোলন। পরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত ও বঞ্চিতদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে ১৪টি সাধারণ ও ২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী পরিবর্তন করে চূড়ান্ত সংশোধিত তালিকা করা হয়।

সর্বশেষ খবর