রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

কলকাতায় জামায়াত ও সিমি নেতাদের ধিক্কার সভা

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার হত্যাকারী কামারুজ্জামানকে সে দেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জামায়াত এবং জামায়াতপন্থি তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। তারা ধিক্কার জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং শেখ হাসিনাকে। তাদের শোক এবং ধিক্কার সভাটি হয়েছে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু সরণিতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারের অফিসের খুব কাছেই। সোমবার টিভি এবং সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দিল্লি থেকে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল কলকাতায় পৌঁছেছে। নিষিদ্ধ উগ্রবাদী মুসলিম সংগঠন সিমি মমতা ব্যানার্জির আমলে অন্য নামে আত্মপ্রকাশ করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন মমতার রাজ্যসভার সদস্য হাসান ইমরান। ইমরান এক সময় সিমির সর্বভারতীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বিশেষ সূত্রে বলা হয়, ওই প্রতিবাদ সভায় মমতা মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মনমোহন সিং থেকে মোদি সরকার যখন বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাজ করছে, সেই সময় জামায়াত ও সিমির সক্রিয় হওয়ায় সাধারণ মানুষ একটাই উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছে। আজ শনিবার কলকাতার পৌর নির্বাচনে জামায়াতীদের ভোট পাওয়ার জন্যই মমতার মন্ত্রীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই দেশদ্রোহীদের চিহ্নিত করার জন্য যতই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলুক, মমতা এবং তার পুলিশ জামায়াত-সিমির বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশ দেবে না। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে জামায়াত-সিমির যে মমতার হয়ে মাঠে নামবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অপরদিকে বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা চক্র আইএসআই এবং আল-কায়েদার প্রত্যক্ষ যোগাযোগের যথেষ্ট প্রমাণ এখন দিল্লির হাতে। এনআইএ’র সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবিকে সরাসরি সমর্থন জুগিয়েছে পাকিস্তানের আইএসআই এবং আল-কায়েদা। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে জেএমবির অর্থের সংস্থান, তাদের সদস্য বাড়ানোর পদ্ধতি এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের প্রমাণ শিগগিরই হাতে আসবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা নির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ঝাড়খন্ডে যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছে জেএমবি। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে যে ৩৯টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছিল সেগুলো তৈরির টাকা আইএসআই এবং আল-কায়েদাই পাঠিয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ অফিসার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব খর্ব করার জন্যই জেএমবিকে ব্যবহার করে থাকে আইএসআই। ২০০৭-০৮ সাল থেকেই জেএমবিকে কাজে লাগাচ্ছে আইএসআই। ওই অফিসার বলেন, জেএমবি-আইএসআই নেটওয়ার্কটাকে পুরোটাই ধ্বংস করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সাহায্য খুবই প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ জানিয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া কওসর, তালহা শেখ, নাসিরুল্লাহ, হাবিবুর রহমান এবং আবদুল কালামের ব্যাপারে খুব শিগগিরই খবর মিলবে বাংলাদেশ থেকে। বর্ধমান ঘটনার আরও অনেক কুশীলবকে এখনো ধরা বাকি। গত মাসে জামা’আতুল মুজাহিদীনের ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে এনআইএ। সেখানে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য এ দেশে ঘাঁটি গেড়েছিল জেএমবি। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ডেরা বেঁধে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ তাদের ডালপালা ছড়িয়েছিল নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমে। ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ আর আসামের কয়েকটা জায়গাতেও জেএমবির উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে।
রবিবার রাতে জামায়াত-সিমির বৈঠকের খবর সোমবার কলকাতার সব কাগজে দেখতে পেয়ে তৃণমূলবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিন্দায় মুখর হয়েছে। গোয়েন্দারা দাবি করছে, জামায়াত-সিমি সক্রিয় হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হবে। কেন্দ্র যতই চেষ্টা করুক মমতা সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়ার তাগিদেই দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। ২০১০ সালে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত কলকাতা পার্ক সার্কাস, দরগা রোড এবং রিপন স্ট্রিট এলাকার কয়েকজন প্রাক্তন সিমি নেতার ডেরায় নিয়মিত যোগাযোগ এবং যাতায়াত ছিল কামারুজ্জামানের। এ রাজ্যে সিমির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা একটি উর্দু সংবাদপত্রের সম্পাদকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। কামারুজ্জামানের গ্রেফতারের পরেও তার সমর্থনে নানা খবর করা হয়েছে ওই পত্রিকায়।

সর্বশেষ খবর